দেড় বছর মেয়াদি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ তিন বছরেও হয়নি শেষ, পাঠদানে বেহাল অবস্থা

received_527094499335592.jpeg

মো:ফিরোজ,বাউফল প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর বাউফলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালি ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তদারকির অভাবে দেড় বছর মেয়াদি বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ কাজ তিন বছরেও শেষ হয়নি। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারনে কখনো রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে আবার কখনো নির্মাণাধীন ভবনের খোলা জায়খায় বিপদজনক ভাবে চলছে পাঠদান। বিদ্যালয় মাঠ জুড়ে নির্মাণ সামগ্রী স্তুপ করে রাখায় তিনবছর ধরে বন্ধ রয়েছে বার্ষিক ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিক্ষার্থী সমাবেশ ও খেলাধুলা। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। এমন চিত্র বাউফলের মদনপুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, ৬০ ভাগ কাজ বাকি রেখে ১বছর ধরে ঠিকাদার উধাও হয়ে গেছে। কয়েক মাস আগে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েও সুফল মিলছে না। কবে কাজ শেষ হবে তা নিয়ে সংশয় শিক্ষক শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টম্বর বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় মদনপুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫তলা একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এ কাজে ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ১২ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮১ টাকা। বরিশালের ‘মের্সাস রূপালী কনস্ট্রাকশন’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। ২০২০ সালের ৫জানুয়ারি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের ১২জুলাই কাজ শেষ করার কথা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় মাঠ জুড়ে ইট বালু খোয়া পাথর ও রডসহ বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রীর স্তুপ পড়ে রয়েছে। নির্মাণাধীন ৫ তলা ভবনের তিনতলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাইয়ের কাজ শেষ। চতুর্থ ও পঞ্চম তলার ছাদ ঢালাইসহ ভবনের প্রায় ৬০ ভাগ কাজ বাকি পড়ে রয়েছে। ওই নির্মাণাধীন ভবনে দেয়ালবিহীন ছাদে অসমাপ্ত নির্মাণ কাজের লোহার রড ও নির্মাণ সামগ্রীর মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন শিক্ষকেরা।
পাঠদানের পরিবেশ অত্যন্ত বিপদজনক হওয়ায় বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। শুধু তাই নয়, ঝুঁকিপূর্ণ শ্রেণিকক্ষে যাতায়াতে এবং বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নির্মাণ সামগ্রীতে অর্ধশত শিক্ষার্থী ও কয়েকজন শিক্ষক বিভিন্ন সময় ছোট বড় দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. হিমেল (১৫) বলেন, তিন বছর ধরে আমরা কষ্ট করে যাচ্ছি। শ্রেণি কক্ষ না থাকায় ঠিকমত ক্লাস হয় না, মাঠ বেদখল থাকায় খেলাধুলা হয় না। এভাবে পড়াশুনা হয় না। এটা কোনো শিক্ষার পরিবেশ হতে পারে না। আমরা দ্রæত এর প্রতিকার চাই। ৮ম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী মোসা. সুমাইয়া আক্তার (১৩) বলেন, পুরাতন ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে। নতুন ভবনে শৌচাগার নেই। শৌচাগার না থাকায় আমরা মেয়েরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম মস্তফা বলেন,‘ দেড় বছরের কাজ তিন বছরেও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। এর মধ্যে ১বছর ধরে কাজ বন্ধ। শ্রেণি কক্ষ সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। মাঠ জুড়ে নির্মাণ সামগ্রী থাকায় তিন বছর ধরে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। ঠিকাদারকে ফোন দিয়ে পাওয়া যায় না। শিক্ষা প্রকৌশলীর কাজে চিঠি দিয়েও কোনো সুফল মেলেনি। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে নির্মাণ কাজ শেষ না করা হলে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা ছাড়া উপয় থাকবে না।
এবিষয়ে জানতে মের্সাস রূপালী কনস্ট্রাকশনের মালিক অমল ঘোষের মুঠোফোনে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার প্রতিনিধি মো. ছগির হোসেন বলেন,‘ বিল না পাওয়ায় কাজ করতে পারছি না। বিল পেলেই কাজ শুরু করবো।

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, কাজ শেষ না করলে ঠিকাদারকে বিল দেওয়া হবে না। দ্রুত কাজ শুরু করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ১সপ্তাহের মধ্যে কাজ শুরু না করলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে।
০৭/০৩/২০২৩
মো:ফিরোজ
বাউফল প্রতিনিধি,পটুয়াখালী।
০১৯১৬২৩৪৬৩১

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top