সিলেটে টিলা কেটে তৈরি হচ্ছে রিসোর্ট : অন্ধ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ!

274290012_349170580465179_4931636625258110235_n.jpg

সিলেট প্রতিনিধি : সিলেটে টিলা কেটে তৈরি হচ্ছে রিসোর্ট : অন্ধ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ! সিলেটে অবাধে চলছে পাহাড়-টিলা কাটার মহোৎসব। পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে পাহাড়-টিলা কাটা অবাধে চললেও অন্ধ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পাহাড়-টিলা কাটা বন্ধে প্রশাসনের উদ্যোগ না থাকায় ‘পাহাড়-টিলা খেকোদের’ আগ্রাসন দিন দিন বাড়ছে। এতে করে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে বন্যপ্রাণীরা হারাচ্ছে আবাসস্থল।

যার কারণে অনেক সময় বাঘ, বানরসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে আসে এবং প্রাণ হারায়। তবে মাঝে মধ্যে পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে প্রশাসনের টনক নড়লে আইওয়াশ অভিযান দিয়ে লোক বুঝানো হয়। এর পরেই আবার শুরু হয়ে যায় পাহাড় কাটার মহোৎসব। তবে এসব পাহাড়-টিলা ধ্বংস করা হচ্ছে এলাকার প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায়। আর তাদের সঙ্গে পকেট ভারীও হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের।

তেমনি সিলেট সদর উপজেলার ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ৮নং ওয়ার্ডের পিরেরবাজার মোকামেরগুল এলাকার শাহসুন্দর (রহ.) মাজারে নিচে বিশাল বড় একটি টিলা কেটে তৈরি হচ্ছে রিসোর্ট। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অন্ধত্বের ফলে প্রকাশ্যে দিবালোকে কয়েক একরের একটি বিশাল টিলা কেটে তৈরি হচ্ছে রিসোর্ট।

আর এসব দেখেও যেনও না দেখার নাটক করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে এখানে টিলা কেটে রিসোর্ট তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগে প্রকাশ।

সরজমিনে দেখা গেছে- শাহজালাল (রহ.) মাজারের খাদেম পরিচয়দানকারী হাফিজ কবির নামের এক ব্যক্তি ওই বিশাল টিলা কেটে তৈরি করছেন রিসোর্ট। কয়েকজন শ্রমিককে সেই টিলা কেটে সমতল করতেও দেখা যায়। টিলাটির নিচের অংশ এমনভাবে কাটা হয়েছে যে, বৃষ্টি হলে উপর থেকে টিলাটি ধসে পড়বে। টিলার কাটা অংশে আলগাভাবে গাছের ডালপালা দিয়ে ডাকা রয়েছে যেন কাটা অংশ বুঝা না যায়।

তাছাড়া এই টিলার মাটি দিয়ে রিসোর্টের জন্য তৈরি হচ্ছে কয়েকশ ফুট উচ্চতার রাস্তাও। যা সরজমিনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিদর্শন করলে সত্যতা প্রকাশ পাবেন। এখনো পর্যন্ত টিলা কেটে রিসোর্টের নির্মাণ কাজ পক্রিয়াধীন রয়েছে। এই টিলা কাটার সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বা প্রভাবশালী ভূমিখোকারা পরোক্ষভাবে জড়িত। তাদের মদদে এসব তৈরী করা হচ্ছে। প্রশাসন বা সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করলে তারা নানাভাবে বাধা-আপত্তি সৃষ্টি করেন।

এছাড়াও আরো জানা গেছে- স্থানীয় এলাকার একটি চিহ্নিত টিলা খেকো চক্র মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এই টিলা কাটার ঠিকাদারি নিয়েছে খাদেম পরিচয়দানকারী হাফিজ কবিরের কাছ থেকে। এখনও এই টিলা খেকো চক্রের নেতৃত্বে এখানে টিলা কাটার মহোৎসব চলছে।

সরজমিনে কোন সাংবাদিক পরিদর্শন করলে কবিরের আগে সেখানে উপস্থিত থাকেন এই টিলা খেকো চক্রের সদস্যরা। এমনকি এই টিলা খেকো চক্রের সদস্যরা প্রায় সময় সাংবাদিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছে বলে অভিযোগ প্রকাশ।

এ ব্যাপারে জায়গার মালিক হাফিজ কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি নিজেকে টিলার মালিক হিসেবে সত্যতা নিশ্চিত করে জানান- আমি রিসোর্ট তৈরি করছি এখানে।

আপনি যে টিলা কেটে রিসোর্ট তৈরি করছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কি কোন ছাড়পত্র আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন থাক ভাই এসব জেনে আর কি করবেন আমি আপনার সাথে কাল দেখা করবো আপাতত সংবাদ টা প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানান। আপনি কাল দেখা করবেন মানে আর আমার সাথে দেখা করেই কি করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন- ভাই এসব বাদ দেন আমাকে আপনি বাঁচান। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় আসলেই কি উনার অনুমতি আছে না কি নেই?

জায়গার মালিক হাফিজ কবিরের বক্তব্য নেয়ার পর প্রতিবেদক পড়েন মহা বিপাকে। প্রতিবেদককে ম্যানেজ করতে একের পর এক লোকজন দিয়ে ফোন দেওয়াতে থাকেন হাফিজ কবির। প্রতিবেদক বলেন- খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের এক মেম্বার, একাধিক সাংবাদিকসহ বহু শ্রেণী পেশার লোকজন এই সংবাদটা প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছেন তাকে। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে প্রতিবেদক তার নিজস্ব গতিতে এগিয়ে আসতে থাকেন।

এ ব্যাপারে সিলেট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুসরাত আজমেরী হকের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- আমি এই স্টেশনে আসছি সপ্তাহ খানেক হয়েছে। এই ব্যাপারটি আমার নলেজে নেই। তবে আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এ ব্যাপারটি আমাকে অবগত করার জন্য এবং অবিলম্বে এ ব্যাপারে আইননুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।

এ ব্যাপারে সিলেট বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ এমরান হোসেন ব্যবহৃত সরকারি নাম্বারে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি।

তবে এ ব্যাপারটি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোঃ হুমায়ুন কবীরকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।

পরিবেশ সংরক্ষণ ৬ (খ) ধারা অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারি বা আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন বা দখলাধীন বা ব্যক্তি মালিকানাধীন পাহাড় ও টিলা কর্তন বা মোচন করতে পারবে না। তবে অপরিহার্য জাতীয় স্বার্থে প্রয়োজনে অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাহাড় বা টিলা কাটা যেতে পারে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।

এ আইনের পরিপ্রেক্ষিতে ও সিলেটে টিলা কাটা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১১ সালের নভেম্বরে উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি। ২০১২ সালে সেই রিটের রায়ে সিলেটে সবধরনের টিলা কাটায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন উচ্চ আদালত।

কিন্তু এসব আইন ও আদেশ লঙ্ঘন করে সিলেট সদর উপজেলার ৪নং খাদিমপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের অন্তর্ভুক্ত ৮নং ওয়ার্ডের পিরেরবাজার মোকামেরগুল এলাকার শাহসুন্দর (রহ.) মাজারে নিচে বিশাল বড় একটি টিলা কেটে তৈরি হচ্ছে রিসোর্ট। প্রভাবশালীদের পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পের স্বার্থেও অনুমোদনহীনভাবে কাটা হচ্ছে টিলা।

তাই স্থানীয়, সচেতন মহল টিলা কাটা ও টিলা খেকোদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার নিকট আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top