২০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ এক সেতুতেই দূর হবে

Screenshot_20230902_140427.jpg

দিন প্রতিদিন ডেস্ক :

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বেলকা ইউনিয়নের কিশামত সদর ও বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তার একটি শাখা নদী। আর সেই নদী পারাপারের জন্য দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে ব্যবহৃত হতো নৌকা। তবে এখন আর তেমন নৌকাও দেখা যায় না। কারণ সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে একটি কাঠের সাঁকো। নড়বড়ে এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিনই যাতায়াত করে দুপাড়ের ২০ হাজার বাসিন্দা। ঝুঁকিপূর্ণ এই কাঠের সাঁকো দিয়ে চলাচলের সময় প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা।
জানা যায়, ২০১৭ সালে তিস্তার শাখা নদীর ওই স্থানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহীম খলিলুল্যাহ দুই ফুট দৈর্ঘ্যের একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দ ও এমপি শামীম হায়দার পাটোয়ারীর সহযোগিতায় সাঁকোটি সংস্কার করা হয়। এতে করে ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা ও উপজেলা শহরসহ বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে চরাঞ্চলের মানুষজনের যাতায়াতের পথ সুগম হয়। এছাড়াও স্কুল, মাদরাসা ও কলেজগামী ছাত্রছাত্রী, শিক্ষকরাও নির্বিঘ্নে যাতায়াত করেন এ সাঁকো দিয়ে।
কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি ও ঢলে কচুরি পানার চাপে কাঠের সাঁকোটি একেবারেই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে যায়। এমতাবস্থায় চলাচলের উপযোগী করতে কয়েকদিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে কচুরি পানা অপসারণের কাজ করছেন স্থানীয়রা।
আরও পড়ুন: নদীগর্ভে বাজার রক্ষা বাঁধ, হুমকির মুখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠা।স্থানীয়রা জানান, এলাকার লোকজন প্রায় ৫০ বছর ধরে নৌকা দিয়ে পারাপার করতো। ২০১৭ সালে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য একটি কাঠের সাঁকো করে দেন। পরে ২০২০ সালের বন্যায় সাঁকোটি ভেঙে যায়। একই বছর চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ ইউনিয়ন পরিষদের বরাদ্দে পুনরায় একটি সাঁকো নির্মাণ করে দেন। তখন থেকে প্রতিবছর সংস্কার করে ওই সাঁকো দিয়ে হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করছেন।
সম্প্রতি কচুরিপানা চাপে সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই সাঁকো দিয়ে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের। কাঠের সাঁকোর কারণে কৃষি, শিক্ষাসহ বিভিন্ন দিকে এখনো পিছিয়ে আছে গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলো। চরাঞ্চলের মানুষের উন্নত জীবন যাত্রার ধারা অব্যাহত রাখতে সাঁকোটির স্থানে সরকারিভাবে সেতু নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।
স্কুলছাত্র মো. নাহিদ মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক কষ্ট করে প্রতিদিন এই সাঁকো পার হয়ে স্কুলে যেতে হয়। এখানে একটা সেতু জরুরি প্রয়োজন।আরও পড়ুন: বড় বড় গর্তে সড়কের বেহালদশা, মেরামত হয় না ৪ বছর
কৃষক আজম মিয়া বলেন, চরাঞ্চলের কৃষকরা অনেক কষ্ট করে ফসল ফলাই। যাতায়াতের সমস্যার কারণে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটে আমরা ন্যায্য দাম পাই না। এইখানে একটা সেতু হলে আমাদের উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে যেতে পারবো, তখন পণ্যের ন্যায্য দামও পাব।
তালুক বেলকা গ্রামের বাসিন্দা ও মুদি ব্যবসায়ী মাইদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, নদীতে সেতু না থাকায় দোকানের মালামাল নিয়ে আসতে খরচ বেশি পড়ে। সেতু হলে খরচ অনেকাংশেই কমে আসবে।
স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক শিহাব মো. শাহাবুদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, চরাঞ্চলের মানুষ সব সময় স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। নদীতে সেতু না থাকায় রোগীদের বহনের জন্য এই এলাকায় কোনো অ্যাম্বুলেন্স আসে না। এজন্য রোগীকে সময় মতো হাসপাতালে নিতে না পারায় অনেকেই বিনা চিকিৎসায় অকালে প্রাণ হারায়।
বেলকা নবাবগঞ্জ গ্রামের বাসিন্দা ও শিক্ষক আতাউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নৌকা দিয়ে পারাপার করলেও কয়েক বছর ধরে কাঠের সাঁকো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চরাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ নদী পার হচ্ছেন। এখানে একটা সেতু হলে চরাঞ্চলের মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।
আরও পড়ুন: নির্মাণের একমাসেই সড়কে খানাখন্দ, উঠে যাচ্ছে পিচ।ইউপি সদস্য মো. হাফিজার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের একটাই দুঃখ এই তিস্তা নদীর শাখাটি। দীর্ঘদিন ধরে কাঠের সাঁকো পারাপারে সমস্যা হচ্ছে। সরকারিভাবে স্থায়ী একটি সেতু নির্মাণ হলে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ জাগো নিউজকে বলেন, চেয়ারম্যান হয়েই ওখানে একটি কাঠের সাঁকো করে দিয়েছি। একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করা হয়েছে। আশা রাখি শীঘ্রই সেতু নির্মাণের অনুমোদন পাওয়া যাবে।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. শামসুল আরেফিন খান জাগো নিউজকে বলেন, ওই স্থানে একটি সেতু নির্মাণে অনুমোদনের জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প পাস হলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top