বিদেশে চিকিৎসায় বছরে ৫০০ কোটি ডলার চলে যাচ্ছে

XRecorder_Edited_27022024_145831-scaled.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদন:

মানসম্পন্ন চিকিৎসা ও আস্থার অভাবে প্রতিবছর প্রায় ৫০০ কোটি ডলার চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। প্রতি ডলার বাংলাদেশি ১১০ টাকা হিসাবে অঙ্কটি দাঁড়ায় ৫৫ হাজার কোটি। গত রবিবার ঢাকা ইউনাইটেড কনভেনশন সেন্টারে ‘পিএইচএ গ্লোবাল সামিট-২০২৪’-এর মূল পর্বের সমাপনী দিনে সংবাদ সম্মেলনে পিএইচএ ট্রাস্টি ডা. বাশার এম আতিকুজ্জামান এ তথ্য দেন। তবে এই ব্যয় আরো বেশি বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অর্থনীতির বিশেষজ্ঞরা।
তাঁরা বলেছেন, প্রতিবছর কত মানুষ চিকিৎসার জন্য বিদেশ যায় এবং কত টাকা দেশ থেকে চলে যাচ্ছে, এর সঠিক হিসাব নেই সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য মতে, প্রতিবছর চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাচ্ছে সাত লাখ মানুষ। এতে ব্যয় হয় অন্তত ৩৫০ কোটি ডলার। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে চিকিৎসা খাতে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বাংলাদেশিদের বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের পরিমাণ দেখানো আছে ১৭ লাখ ডলার।
আগের অর্থবছরে (২০২১-২২) এর পরিমাণ ছিল ৩২ লাখ ডলার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, চিকিৎসার জন্য মানুষ বিভিন্নভাবে বিদেশে যাচ্ছে। কেউ মেডিক্যাল ভিসায়, কেউ ভ্রমণ ভিসা, কেউ বা ট্যুরিস্ট ভিসায়। তাদের অর্থ নেওয়ার অন্যতম উৎস হলো ক্রেডিট কার্ড ও হুন্ডি।

কেননা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ডলার এনডোর্স করাতে মেডিক্যাল বোর্ডের সুপারিশ, চিকিৎসার সব নথিপত্র জমা দেওয়াসহ অনেক ধরনের ঝামেলা পোহাতে হয়, যা অনেকের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব হয় না। তাই বিদেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যাংকের যে অর্থ যাচ্ছে তা প্রকৃত চিত্রের নগণ্য পরিমাণ।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা.বে-নজির আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যসেবা খাত বাণিজ্যমুখী হয়ে গেছে। যে কারণে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা ক্রমাগত বেড়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবার মান অনেক ক্ষেত্রে কমে যাওয়া এবং স্বাস্থ্যসেবার প্রতি আস্থার সংকটে মানুষ বিদেশমুখী হচ্ছে।

ডা.বে-নজির আহমেদ বলেন,মানুষের বিদেশমুখী প্রবণতা কমাতে হলে সরকারি সেবাকেন্দ্রগুলো, যেমন—উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতালে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া রোগীদের সর্বোচ্চসংখ্যক ক্যান্সারে আক্রান্ত, যা মোট রোগীর ২১ শতাংশ। এরপর ১৮ শতাংশ হৃদরোগ, ১৩ শতাংশ যাচ্ছে প্রজনন জটিলতার কারণে। আর অন্যদের মধ্যে অর্থোপেডিক, গ্যাস্ট্রোএন্টরোলজি, লিভার, কিডনি, চোখ, কান ও স্নায়বিক চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক পিএইচডি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় আরো বলা হয়, বাংলাদেশি রোগীদের পছন্দের তালিকায় ভারত শীর্ষে রয়েছে, যা বিদেশে যাওয়া মোট রোগীর ৯২ শতাংশ। এর বাইরে ৮ শতাংশ যাচ্ছে থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ায়।

‘পিএইচএ গ্লোবাল সামিট-২০২৪’-এর মূল পর্বের সমাপনী দিনে গত রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে ডা. বাশার এম আতিকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের অন্যতম দায়িত্ব হলো বিদেশে যাওয়া এই অর্থের অপচয়টা রোধ করা। এ জন্য উন্নত টেকনোলজি, চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ ও নতুন সেবা কার্যক্রম শুরু করতে হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে প্ল্যানেটারি হেলথ একাডেমিয়ার (পিএইচএ) চেয়ারপারসন ও ট্রাস্টি ডা. তাসবিরুল ইসলাম, পিএইচএ ট্রাস্টি ডা. নাসের খান, ডা. মো. জাকের উল্লাহ, ডা. চৌধুরী এইচ আহসান, ডা. শাকিল ফরিদ ও ওমর শরীফ উপস্থিত ছিলেন।

এ ধরনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুধু বাংলাদেশে নয়, দক্ষিণ এশিয়ায় এই প্রথম। ৯ দিনের এই সম্মেলনে দুই হাজারের বেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও মেডিক্যাল শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছেন।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top