রিপোর্টার,মোঃ মাজেদুল ইসলাম:-
সাভারে চুরির অপবাদ দিয়ে শিশু গৃহকর্মীকে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত দম্পতিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ । এঘটনায় শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রবিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন— সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন।
এর আগে শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে সাভারের রাজাশন এলাকা থেকে তাদেরকে আটক করা হয়। তার আগে দুপুরে নির্যাতনের শিকার শিশুর মা কুলসুম বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর থানার ঘরিয়ালা গ্রামের কাজী লুৎফর রহমানের ছেলে কাজী ইসমাইল হোসেন (৩২) ও তার স্ত্রী মাহমুদা খান পরশ মনি (২৬)। কাজী ইসমাইল ৪২ তম বিসিএস ক্যাডার ও বরগুনা সদর হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী শিশুর নাম মিম (১১)। সে সাভারের রাজাশন এলাকার ভাড়াটিয়া আনোয়ার হোসেনের মেয়ে। তারা সাভারের বিরুলিয়া এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, কাজী ইসমাইল ও তার স্ত্রী মাহমুদা খাতুন পরশ ভুক্তভোগী শিশুর পরিবারের পূর্ব পরিচিত। সেই সুবাদে মিমকে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে নেয় তারা। কিন্তু গত ১ বছর কাজ করার পরেও ঠিকমতো বেতন প্রদান করে নি। সেই বেতনের টাকা চাইলে শিশুকে ছুরি দিয়ে খুঁচিয়ে অমানবিক নির্যাতন করেন অভিযুক্তরা। নির্যাতনের বিষয়টি শিশুর পরিবার যাতে না জানতে পারে সে জন্য পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে বাধ্য করে ওই দম্পতি। পরে গতকাল ভুক্তভোগী শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করে ভয়ভীতি দেখায় আটকরা। পরে সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স শিশুটিকে ভর্তি করে থানায় অভিযোগ দায়ের করে ভুক্তভোগী পরিবার।
ভুক্তভোগী শিশু মিম বলে, `আমি প্রায় ১ বছর ধরে ওই বাসায় কাজ করছিলাম। ওই বাসায় যাওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন আমাকে আদর করেছে। কিন্তু কিছুদিন পরই আমাকে মারধর করতে থাকে। সর্বশেষ আমাকে চুরির অপবাদ দিয়ে ছোট ছুরি দিয়ে সারা শরীরে খুঁচিয়ে নির্যাতন করেছে। এছাড়া ব্যাট দিয়ে পায়ে ও মাথায় আঘাত করেছে। আমি নাকি ২/১ হাজার টাকা চুরি করে আমার মায়ের কাছে দিয়েছি। এমন অপবাদ দিয়ে আমাকে প্রায় প্রতিদিন মারধর করেছে। পরে গতকাল আমাকে আমার বাড়িতে দিয়ে বাবাকে নানা ধরনের হুমকি দিয়ে চলে যায় তারা। আজ দুপুরে কিছু লোক বাসায় গিয়ে আমাকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে।
এব্যাপারে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, ভুক্তভোগীর সারা শরীরে নতুন ও পুরাতন ভোঁতা এবং ধারালো অস্ত্রের ক্ষত রয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত সে হাসপাতালে ভর্তি থাকবে।
এব্যাপারে সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন বলেন, খবর পেয়ে আমরা হাসপাতালে শিশুটিকে দেখতে গিয়েছি। ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি নির্যাতনের শিকার শিশুটির সারা শরীরে নতুন ও পুরাতন আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের আটক করা হয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে মারধরের কথা স্বীকার করেছেন। পরবর্তীতে শিশু আইনে অভিযোগটি এজাহারভুক্ত করা হয়।