সুমন কান্তি দাশ : সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা করছেন না চকরিয়া উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররা। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররা। হাসপাতাল সংলগ্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিণত হয়েছে চিকিৎসকদের প্রাইভেট ক্লিনিকে। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীদের যেতে হচ্ছে ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বারে। সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া মূল্যবান ঔষুধও ভাগ্যে জুটেনা রোগীদের। সরকারের বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুসারে সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত ডাক্তারদের হাসপাতালে আগত রোগী দেখার নিয়ম থাকলেও মূল পিকআওয়ার টাইম ১০টা থেকে ১২টা।
রোগীদের অভিযোগ, ডাক্তাররা প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা সেবায় ব্যস্ত থাকেন। তাই এ সময় তাদের খুঁজে পাওয়া মুশকিল।
শুধুমাত্র সরকারের দেয়া বেতন নিতে কয়েক ঘণ্টা সময় হাসপাতালে কাটিয়ে তারা ব্যক্তিগত চেম্বারে প্রাইভেট রোগী দেখতে চলে যান। এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটি হাসপাতালের অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে সরেজমিনে তদন্ত করে বহুবার প্রতিবেদন দিলেও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনও আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
প্রতিদিন এ হাসপাতালে উপজেলার ১টি পৌরসভাসহ ১৮ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা রোগীরা সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিনিয়ত ঘটছে রোগীদের হয়রানি আর দুর্ভোগ। মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবা।
হাসপাতাল টু ক্লিনিকে যাওয়া আসার মধ্যে থাকা চিকিৎসকদের খোঁজ নিতে গিয়ে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে হাঁড়জোড়া, বাতের ব্যাথা, মেরুদণ্ড-কোমর ব্যাথার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সুজন ত্রিপুরা হাসপাতালে নেই। তিনি রোগী দেখছেন চকরিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ওসান সিটি মার্কেটের ডা. শম্ভু দে এর চেম্বারে।
সরকার কর্তৃক বেঁধে দেয়া নিয়ম অনুসারে সকাল ৮টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তিনি রোগী দেখছেন সেখানে।
এ হাসপাতালে নিয়োজিত ডাক্তারদের বেশির ভাগই প্রাইভেট ক্লিনিক নিয়ে ব্যস্ত। অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এখানে কর্মরত থাকায় হাসপাতালটিকে তাদের পৈত্রিক জমিদারীতে পরিণত করেছেন। অফিস চলাকালীন সময়েও ডাক্তাদের প্রাইভেট চেম্বারে বসে রোগী দেখার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের দীর্ঘ লাইন, কিন্তু দেখা নেই কোনও ডাক্তারের। প্রায় ডাক্তার কক্ষেই তালা ঝুলানো, শুধু কয়েকজন ডাক্তার বসে সব রোগীদের কিছু প্যারাসিট্যামল, নাপা, গ্যাস্টিকের ঔষুধ লিখে দিয়ে বিদায় করে দিচ্ছেন।
তালা লাগানো রুমের ডাক্তারা গেল কোথায় জানতে চাওয়া হলে হাসপাতালে আগত রোগীরা বলেন, সকাল থেকে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, কোনও ডাক্তার এসে রোগী দেখেনি। শুধু কয়েকজন ডাক্তার দিয়ে সব রোগের রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের অফিস সহকারি বলেন, এখন প্রতিদিনই এরকম হয়। আমরা প্রতিবাদ করলে বদলি করে দেয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। তাই আমরা দেখেও চুপ করে থাকি। সরকার নিযুক্ত এখানে ৭-৮জন কনসালটেন্ট প্রতিদিন রোগী দেখার কথা থাকলেও দু’একজন কনসালটেন্ট ছাড়া বাকিরা আসে সপ্তাহে ১দিন।
ডাক্তার অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ইনচার্জ (টিএইচ) ডা. শোভন দত্ত ‘দৈনিক দিন প্রতিদিন কে বলেন, আমি চলতি বছরের ১০ই ফেব্রুয়ারি হাসপাতালের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। হাসপাতাল তিনটি বিভাগে পরিচালিত হয়ে থাকে- বহিঃবিভাগ, জরুরি বিভাগ, আবাসন বিভাগ। নিয়ম নীতি অনুসারে যথাসময়ে প্রত্যেক ডাক্তারদের স্ব স্ব দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দিয়েছি। কিন্তু আমি অফিসিয়াল কাজে কক্সবাজার থাকায় আপনার মাধ্যমে অবগত হয়েছি অফিস চলাকালীন সময়ে ডাক্তাররা বাইরের চেম্বারে বসে রোগী দেখছেন। এ বিষয়ে অফিসিয়ালি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।