জবি প্রতিনিধি:
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ক্যাম্পাসের সীমানা প্রাচীরের দেওয়ালের উপরের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে পড়েছে। এছাড়া অধিকাংশে দেয়ালে নেই কোনো নিরাপত্তা বেষ্টনী কিংবা তারকাঁটার সীমানা। এতে যে কেউ সহজে দেয়াল টপকে প্রবেশ করতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে এমনটা মনে করছেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেটের পাশে সদরঘাট অভিমুখী রাস্তার পাশে থাকা ক্যাম্পাসের জ্বীম-ওয়াসি চত্বর থেকে শুরু করে প্রায় ৮০ মিটারের বেশি সীমানা প্রাচীরের মধ্যে নির্মিত লোহার বেষ্টনীটি ভেঙে পড়েছে এবং কিছু অংশে লোহার বেষ্টনী একেবারে নেই।
এছাড়াও সীমানা প্রাচীরের কিছু কিছু অংশের পিলারসহ নিরাপত্তা বেষ্টনীগুলো ভেঙে পড়ে আছে এখনো পর্যন্ত। এদিকে দেয়ালের পাশ ঘিরে রয়েছে ছাত্রীদের কমনরুম। যার ফলে ঘটতে পারে যেকোনো সময় অনাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এমনটা বলছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
তবে এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বরত কর্তা-ব্যক্তিরা দেখেও না দেখার পায়তারা করছে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যদিও এসব বিষয়ে একাধিক বার বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল এবং পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলেও কোনো ধরনের প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেটের পাশে রয়েছে সদরঘাট, বাংলা বাজার, ইসলামপুর, পাটুয়াতলীসহ বিভিন্ন স্থান অভিমুখী রাস্তা। এসব রাস্তায় পারাপার হওয়া পথচারীরা প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানাপ্রচীরের সঙ্গে থাকা ফুটপাত দিয়ে চলাচল করে। যার ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হন। সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় আছে ছাত্রী কমনরুম ব্যবহারকারী শিক্ষার্থীরা।
কমনরুমে আসা একাধিক শিক্ষার্থী দাবি করেন, আমরা সকাল বেলা বাসে করে অনেকে অনেক দূর-দূরান্তে থেকে ক্যাম্পাসে আসি। তখন কারও ক্লাস থাকে আবার কারও ক্লাস থাকে না। সেক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ে ছোট্ট পরিসরের এ কমনরুমে সবাই নিজেদের মতো করে সময় কাটাই। কিন্তু রাস্তার পাশের ড্রেনের কাজের সময় ফুটফাটটা উঁচু করায় সাধারণ পথচারীরা সহজে কমনরুমের করিডর দেখতে পাই।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, দেয়ালের উপরের অংশে লোহার বেষ্টনী ভেঙে পড়ে আছে অনেক দিন ধরে এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কারও কোনো মনে হয় মাথা ব্যাথা নেই। এজন্য এখন অনেকে কমনরুমে আসা বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হয়তো ভুলে গেছে এখানে একটা কমনরুম রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা আফরিন বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের পরিধি স্বল্প পরিসরে হওয়ায় নানাবিধ সংকট রয়েছে। তারমধ্যে আমরা এ ছোট একটি কমনরুম ব্যবহারের সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হতে যাচ্ছি। আমাদের কমনরুমের পাশে সদরঘাট অভিমুখী রাস্তা। এ রাস্তার পাশে থাকা ফুটপাতগুলো এতো উঁচু যে কেউ রাস্তার পাশ থেকে আমাদের কমনরুম দেখতে পারে এবং অচিরেই চাইলে দেয়াল টপকে ভিতরে প্রবেশ করতে পারে।
ফারজানা আরও বলেন, আমরা মেয়েরা সকালবেলা বিভিন্ন দূরদূরান্ত থেকে ক্যাম্পাসে এসে ক্লাসে যাওয়ার আগে অথবা ক্লাসের মাঝের সময়ে কমনরুমে এসে একটু সাজসজ্জা করি, কেউ বা একটু গল্পের বই পড়ে এবং কেউ গান করে কিন্তু এখন আর সেটা করতে পারি না। আমাদের কমনরুমের পাশের সীমানা প্রাচীরের লোহার বেষ্টনী তো নেই বটে কোনো ধরনের নিরাপত্তা নেই এখন কমনরুমে। যে কোনো সময়ে ঘটে যেতে পারে অনাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী সায়মা ইয়ান বলেন, আমরা মেয়েরা সাধারণত কমনরুমে এসে যেকোনো অবস্থায় নিজেদের মতো করে সময় কাঁটায়। অনেকে বই পড়ে কিংবা নিজেদের মতো করে কমনরুমের বারান্দায় গল্প করে। কিন্তু বেশকিছুদিন ধরে আমাদের কমনরুমের আশেপাশের অংশ জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়ালের নিরাপত্তা বেষ্টনীটি নেই। যা নিয়ে আমরা বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা আতংকিত।
এ শিক্ষার্থী আরও বলেন, অনেক সময় রাস্তা পাশ দিয়ে যাওয়া – আসা লোকজন উঁকি মারে এবং মাঝেমধ্যে দাড়িয়ে থাকে। যার ফলে আমাদের মধ্যে অনেকে কমনরুম ব্যবহার করা ছেড়ে দিয়েছে। যা নিয়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ এবং অনীহা প্রকাশ করেছে। সে সঙ্গে দাবি জানিয়েছে সকলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যেন দেয়ালের নিরাপত্তা বেষ্টনী বসানো হয়। এতে করে আমি আশাবাদী সকল শিক্ষার্থীরা আবারো কমনরুমে ফিরবে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান প্রকৌশলী মো, হেলাল উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, সীমানা প্রাচীরের কাজের জন্য দাপ্তরিক প্রাক্কলনে আমি ইষ্টিমেট প্রস্তুত করে রেখেছি। কিন্তু এখানে তো আমার একার কোনো কিছু করার নেই, বিশ্ববিদ্যালয় কবে পাশ করবে সেটা আমি জানি না। তবে আমি আরেকবার মনে করিয়ে দিবো।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, এ বিষয়ে আমরা একটা রিপোর্ট দিয়েছি প্রকৌশলী দপ্তরে। আশা করি শীঘ্রই কাজটা শুরু করবে প্রকৌশলী দপ্তর।