মোঃ জুয়েল রানা, স্টাফ রিপোর্টারঃ
কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় দশ লাখ টাকা পাওনার সুবাদে ত্রিশ লাখ টাকা মূল্যের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ভিটিকান্দি ইউনিয়নের দুলারামপুর গ্রামের মৃত ফজলুল হক মিয়ার বাড়িতে।
এঘটনায় জমির মালিক আমির সরকার(৫৭) বাদী হয়ে তিতাস থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগের আলোকে মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে গেলে দুলারামপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মতিন মিয়া বলেন, আনুমানিক পাঁচ বছর পূর্বে দুলরামপুর গ্রামের আমির সরকারের ছেলে কামাল ও একই গ্রামের দোকানি মফিজ মিয়ার সাথে দোকান বাকীর টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় দোকানি মফিজ মিয়া। এঘটনাকে হত্যা দাবি করলে,স্থানীয় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্লাসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ বিষয়টি দশ লাখ টাকার বিনিময়ে মিমাংসা করে দেন। তখন বিবাদীগন তাৎক্ষণিক ১০ লক্ষ টকা জোগার করতে না পারায় সাবেক চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্লা বিবাদী কামাল হোসেন, তার মা জোসনা বেগম ও নানী আমেনা খাতুনকে দশ লাখ টাকা এক সপ্তাহের জন্য ধার দেন, তার বিনিময়ে আবুল হোসেন মোল্লা বিবাদীগণের কাছ থেকে রাস্তার পাশে থাকা ১১ শতাংশ একটি জমির মুল দলিলসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে নেয়। আজ ৫ বছর পর আবুল হোসেন মোল্লা ঐ জমিতে বালু ভরাটের জন্য ড্রেজার আনলে আমির সরকার গংরা বাদা প্রদান করেন।
এদিকে জমির মালিক আমির সরকার বলেন, আমি বিদেশে থাকা অবস্থায় গত ৫ বছর পূর্বে আমার ছেলে কামাল এর সাথে দোকান বাকীর টাকা নিয়ে দোকানী মফিজ মিয়ার সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনার কিছুক্ষণ পর মফিজ মিয়া হেটে বাড়ীতে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে এবং তার মৃত্যু হয়। এঘটনাকে হত্যায় রুপান্তরিত করে ওই দিন রাতেই বিচার সালিশের মাধ্যমে আমাদের উপর ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে এবং তাৎক্ষণিক জরিমানার টাকা পরিশোধ করার কথা বলে। তখন আমরা টাকা দিতে না পারলে চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্লা ১৫ দিনের জন্য আমাদের জমির দলিল ও স্ট্যাম্প নিয়ে দশ লাখ টাকা এক সপ্তাহের জন্য ধার দেন। আমরা সে ধারের টাকা ৪ দিন পর আবুল হোসেন মোল্লার কাছে নিয়ে গেলে সে আমাদের টাকাও নেয় না এবং আমাদের কাছ থেকে নেওয়া স্টাম্প ও দলিলও ফেরত দেয় না।
এখন ৫ বছর পর ১০লাখ টকার বিনিময়ে আমাদের ৩০ লাখ টাকার জমি দখল করার চেষ্টা করছে আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই।
অন্যদিকে অভিযুক্ত সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হোসেন মোল্লা বলেন, ৫বছর পূর্বে হত্যার ঘটনায় বিচার সালিশির মাধ্যমে তাদের ১০লাখ টাকা জরিমানা করা হলে জায়গা বিক্রি করে দিতে হবে বলে তারা জানান। তখন বিবাদীগণ অনেককেই বলছে জায়গাটা রাখার জন্য কিন্তু কেউ জায়গাটি রাখতে রাজি হয় নাই। পরে পঞ্চায়েত ও বিবাদীগণ আমাকে অনুরোধ করে জায়গাটি রাখার জন্য আমি রাজি হই নাই, বার বার অনুরোধ করার পর ১০ লাখ টাকা দাম নির্ধারণ করে আমার ছেলে জহিরকে রাজি করানো হয়। কিন্তু আমার ছেলে টাকার দেওয়ার সময় বলেও দিয়েছি এক সপ্তাহের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে পারলে স্ট্যাম্প ও দলিল ফেরত দিয়ে দিবো। কিন্তু আজ ৫ বছর হয়েছে তারা আর টাকা নিয়ে আসে নাই।
এছাড়াও তিনি আরো বলেন, এঘটনাটি ৫ বছর পর গত শুক্রবার রাতে আবার বিচারকগন ও বিবাদীগণ বসে আমার উপর আবার ৬লাখ টাকা ধার্য্য করে তাতেও আমি রাজি হয়েছি এবং তারাও রাজি হয়েছে। এখন ড্রেজার এনে মাটি ভরাট করতে গেলে তারা কেন বাদা দেয় তা আমি জানি না।
বিচারক মতিন ভূইয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত শুক্রবার রাতে আমির সরকার, তার স্ত্রী জোসনা বেগম ও শাশুড়ী আমেনা খাতুন কয়েকজন লোক নিয়ে এসে বলেন আরো কিছু টাকা দিলে জমি রেজিস্ট্রি করে দিবে, তখন জালাল উদ্দিন, আক্তার মিয়ার উপস্থিতিতে আরও ছয় লাখ টাকা দিয়ে দিবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। আজ কেনো তারা মিথ্যা কথা বলে জানিনা।
এবিষয়ে তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ সুধীন চন্দ্র দাস বলেন, এই ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।