মো:ফিরোজ,বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত¡াবধানে ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় বিভিন্ন প্রকল্প কাগজে কলমে বাস্তবায়িত দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। তবে বাস্তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষের ৯ মাস পার হলেও কাজের কোনো চিহৃ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে বাউফল উপজেলায় এডিপির আওতায় ৬৭টি প্রকল্প নেওয়া হয়। মোট বরাদ্দ ছিল ১কোটি ৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা। ১৫টি প্যাকেজে ৪১টি প্রকল্প ছিল দরপত্রের মাধ্যমে। বাকি ২৬টি প্রকল্প সিপিসি করে বাস্তবায়নের কথা বলা হয়। উপজেলা পরিষদের এডিপির বরাদ্দের এসব প্রকল্প এলজিইডির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়েছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ছিল বিভিন্ন ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, পাকা ঘাটলা, নলকূপ স্থাপন, শৌচাগার নির্মাণ ও রাস্তা সংস্কার। চুক্তি অনুযায়ী ৪৫দিনের মধ্যে এসব প্রকল্পে কাজ শেষ হওয়ার কথা।
তবে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৯মাস পার হলেও বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্প সিপিসি প্রকল্প বাস্তবায়িত দেখিয়ে বিল উত্তোলন করে নিয়েছেন। মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. সুলতান হোসেন ওই বিল প্রদান করে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
এডিপির আতওয়ায় উপজেলার ধুলিয়া ইউনিয়নের চাঁদকাঠী গ্রামে নুর মোহাম্মাদ সিকদার বাড়ির মসজিদে পাকা ঘাটলা নির্মাণ, ঘুরচাকাঠী ইসমাইল সরদার বাড়ি পাকা ঘাটলা নির্মাণ ও চাদকাঠী গ্রামের সিকদার বাড়ি একটি গভীর নলকূপ স্থাপণের জন্য ৩লাখ ৪ হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে পটুয়াখালীর মের্সাস মানজারুল এন্টার প্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যাদেশ দেয়। কাগজে কলমে কাজ বাস্তবায়িত দেখিয়ে ঠিকাদারকে বিলও প্রদান করেন উপজেলা প্রকৌশলী। তবে বাস্তবে কাজের কোনো চিহৃ পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের ৪৫দিন মেয়াদের পার হয়ে গেছে ৯মাসেরও বেশি সময়।
এবিষয়ে ঠিকদার শাওন বলেন, কাজটি খোকনের কাছে বিক্রি করে দিয়েছি। আর খোকন বলেন, কয়কেদিনের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে। কাজ না করে বিল উত্তোলনে বিষয় জানতে চাইলে বলেন, ‘সমস্যা নাই, জামানত জমা আছে।’
একই এডিপি প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডে শহিদ সিকদারের বাড়ির সামনের খালে পাকা ঘাটলা নির্মাণের জন্য দেড় লাখ টাকা ও কালাইয়া ইউনিয়নের উত্তর শৌলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন মসজিদে গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় । কাগজে কলমে পাকা ঘাটলা ও নলকূপ স্থাপন কাজ বাস্তবায়িত। বিলও উত্তোলন করেন করেন সিপিসি। তবে পাকা ঘাটলা ও নলকূল খুঁজে পাওয়া যায়নি। একইভাবে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধানদী গ্রামে আ. ছত্তার শিকদার বাড়িতে গভীর নলকূপ স্থাপন না করে বরাদ্ধের ৯০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. রুবেল তালুকদার। সাবেক এই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রকল্পের বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
অপরদিকে এডিপির প্রকল্পের আওতায় ৫লাখ ৪১হাজার টাকা চুক্তিমূল্যে উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের দুইটি বাড়ির প্রবেশ পথে ইটের সলিং রাস্তা নির্মাণ ও দুই টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বেঞ্চ সরবারহ করেন মেসার্স নিউ আহম্মেদ নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নামমাত্র ইটের সলিং ও দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাত্র ১৬জোড়া বেঞ্চ সরবারহ করে প্রকল্পের পুরো টাকা আত্মসাত করেন ঠিকাদার। এবিষয়ে জানতে ওই ঠিকাদারকে পাওয়া যায়নি। তার ফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেনি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মো. সুলতান হোসেন বলেন,‘কোনো কাজই পেন্ডিং থাকবে না। আমি এসওদের নিয়ে বসে কাজ গুলো বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিব।’
এবিষয়ে বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আল-আমিন বলেন,‘ বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’