বরগুনা প্রতিনিধি:
বরগুনার বামনা উপজেলায় ১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য প্রদান অনুষ্ঠানে সরকার দলীয় দু পক্ষের হাতাহাতির ঘটনার সংবাদ প্রকাশের জেরে স্থানীয় দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বরিশাল বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালে বুধবার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন বামনা উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোঃ গোলাম ফারুক মামলার অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে আগামী ২২ অক্টোবর বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের বেঞ্চ সহকারী নুরুল ইসলাম কাঁকন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় আসামি করা হয়েছে দৈনিক যুগান্তরের বামনা উপজেলা প্রতিনিধি, বরগুনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক সাগরকূলের সম্পাদক ও প্রকাশক এবং বামনা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ নেছার উদ্দিন এবং দৈনিক সাগরকূলের নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান আশিককে।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, সৈনিক লীগসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভুলবুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। পরে স্থানীয় নেতারা বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। কিন্তু যুবলীগ নেতার (সাইফুল ইসলাম) ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সুনাম নষ্ট করার জন্য তাঁর অনুমতি ছাড়া ছবি ও তথ্য দিয়ে “দৈনিক যুগান্তর” পত্রিকার অনলাইনে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করেন স্থানীয় প্রতিনিধি নেছার উদ্দিন। পরে একই প্রতিবেদন তিনি (নেছার উদ্দিন) তাঁর অনলাইন পত্রিকায়ও প্রকাশ করেন। সাগরকূল পত্রিকার সাংবাদিক মাহমুদুল হাসান শেয়ার করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বামনা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ১৫ আগস্ট সকাল ৯টায় জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসন পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সরকার দলীয় সকল সংগঠন ও উপজেলার বিভিন্ন দপ্তর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এসময় বামনা উপজেলা সৈনিক লীগের সভাপতি আলমগীর হোসেন খান, সাধারণ সম্পাদক মীর সাব্বির আলীমসহ নেতা কর্মীরা পুষ্পস্তবক নিয়ে যায়। তখন বামনা উপজেলা যুবলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম সরোয়ার তাদের পুষ্পস্তবক অর্পণ থেকে বিরত থাকতে বলেন। সৈনিক লীগ সভাপতি প্রতিবাদ করলে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাংশ তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এসময় অপর পক্ষও চড়াও হলে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এসময় বেশকিছু পুষ্পস্তবক ভাঙচুর করে বিক্ষুদ্ধ কর্মীরা। এ নিয়ে দৈনিক যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দৈনিক কালেরকন্ঠ, প্রতিদিনের বাংলাদেশ, দৈনিক সাগরকূলসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
ভুক্তভোগী বামনা উপজেলা সৈনিকলীগ সভাপতি আলমগীর হোসেন খান অভিযোগ করেন, আমি আমার নেতাকর্মীদের নিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে গেলে আমাকে ভিতরে যেতে বাঁধা দেয় যুবলীগ সভাপতি সাইফুল ইসলাম সরোয়ার। তিনি আমায় বলেন আপনার ফুল দেওয়া লাগবে না। আপনি এখান থেকে চলে যান। এঘটনার প্রতিবাদ করলে যুবলীগ সভাপতি আচমকা আমাকে লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। পরে তার অনুসারি যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারাও আমার ওপর চড়াও হয়।
ঘটনার ভিডিও ও ঘটনাস্থলের ছবি বিভিন্ন ব্যক্তির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়। কিন্তু মামলার আসামী মোঃ নেছার উদ্দিনের ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা যায়নি।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক নেছার উদ্দিন বলেন, ‘জাতীয় শোক দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে ওই ঘটনার সময় বামনা উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মোঃ সাইফুল ইসলাম সরোয়ারের হামলার শিকার বামনা উপজেলা সৈনিক লীগের সভাপতি মোঃ আলমগীর খানের বক্তব্যের ভিডিও ও ঘটনাস্থলের ছবি নিয়েই সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। এ সংবাদ শুধু যুগান্তর নয়, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু মামলা করা হয়েছে শুধু আমার বিরুদ্ধে। এটা কেন করা হয়েছে, সেটা বুঝতে পারছি না।’
সাংবাদিকদের নামে সাইবার আদালতে মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বামনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোঃ হারুন অর রশিদ বলেন, শোক দিবসের অনুষ্ঠানে হাতাহাতি ন্যক্কারজনক ঘটনা। যারা ঘটিয়েছে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত। সাংবাদিকরা ঘটনাটি তুলে ধরে কোনো অন্যায় করেননি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা শতভাগ নোংরামি। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়েরের নিন্দা জানিয়েছে বরগুনাসহ বেতাগী, বামনা, পাথরঘাটা, আমতলী ও তালতলী প্রেস ক্লাব ও সাংবাদিক সংগঠন।
বামনা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, আমি লোকমুখে শুনেছি দুই সাংবাদিকের নামে সাইবার আদালতে মামলা হয়েছে। আদালত থেকে কোনো কাগজ এখনো আমার হাতে পৌঁছায়নি।
এদিকে দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার ঘটনাকে অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করেছেন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। তাঁরা এ মামলাকে স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর আঘাত বলে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছেন।
বামনা উপজেলা সাংবাদিক সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনোতোষ হাওলাদার বলেন, ‘সংবাদ প্রকাশের জেরে কথায় কথায় ডিজিটাল আইনে মামলা দেওয়া হলে সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা সংকুচিত হয়ে পড়বে। আমরা এ মামলার নিন্দা জানাই এবং এ ঘটনার প্রতিবাদে কর্মসূচি দেব।’
বামনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাসির মোল্লা বলেন, বামনা প্রেসক্লাবের সভাপতির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করায় নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবী করছি।