পরিবেশ দিবস উপলক্ষে “পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে করনীয়” শীর্ষক আলোচনা সভা

Program-Photo-1.jpeg

              “পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে করনীয়” শীর্ষক আলোচনা সভা

পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজনে এবং বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) সহ ১৫টি পরিবেশবাদী ও সামাজিক সংগঠনের সহআয়োজনে অদ্য ৬ জুন ২০২২ সোমবার বিকেল ৩.৩০ টায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অডিটরিয়াম, ঢাকা-তে পরিবেশ দিবস-২০২২ উপলক্ষ্যে “পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে করনীয়” শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে। উক্ত সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাপসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। বাপার যুগ্ন সম্পাদক এবং বুড়িগঙ্গা বাঁচাও আন্দোলনের সমন্বয়ক মিহির বিশ্বাস এর সঞ্চালনায় করে উক্ত আলোচনা সভার সভাপতিত্ব করেন বাপা’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার, প্রধান অতিথি  ছিলেন, বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) এর মাননীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ।

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বাংলাদেশের পরিবেশগত নানা সমস্যা কারণ তুলে ধরেন এবং বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এর কর্তৃক পরিচালিত কয়েকটি গবেষণার ফলাফল প্রদর্শন করেন। বিশেষ করে তিনি বায়ু, শব্দ, পানি ও দৃষ্টি দূষণ রোধে করণীয় বিষায়াবলী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন এবং সরকারের গৃহিত পদক্ষেপগুলোকে তুলে ধরেন। তিনি আরও বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের একক পক্ষে দূষণ নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব নয়, এর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের বাজেট ও লোকবল বাড়ানোর দরকার।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, পরিবেশ উন্নয়নে অনেক আইন দেশে বিদ্যমান আছে কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। সর্বোপরি সরকারের উন্নয়ন করতে পারে। পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা যথেষ্ট। প্রথমে যে কাজটি হাতে নেওয়া দরকার তা হলো পলিথিন-প্লাস্টিক দ্রব্য ব্যবহার কঠোরভাবে দমন করা। এতে জনসচেতনতাও জোরদার করা প্রয়োজন। তরুণ সমাজকে পরিবেশ রক্ষার কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। বিশ্ব পরিসরে বৃহৎ শক্তিবর্গ যারা পরিবেশ দূষণের জন্য দায়ী তাদের বোধহয় একান্ত প্রয়োজন না হলে সভ্যতা ধ্বংসের মুখোমুখি হবে।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলী শেখ বলেন, পরিবেশ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না গেলে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য পৃথিবীতে বসবাস করা ঝুঁকি হয়ে যাবে। যেহেতু একটাই পৃথিবী তাই একে আমাদের জন্য বসবাস উপযোগী করতে হবে। তিনি ই-বর্জ্য এবং মাইক্রোপ্লাস্টিক এর ভবিষ্যত ঝুঁকি এবং এ থেকে পরিত্রানের জন্য সকলকে এখনই সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাপা’র সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম ফিরোজ আহমেদ বলেন, উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। উন্নয়নকে পরিবেশবান্ধব করার জন্য আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আলী নকি বলেন, পরিবেশ সচেতনতা শুরু ব্যক্তি পর্যায় থেকে, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয়; তা একটি বিশ্ব জাগতিক আন্দোলনের রুপ নেয়। দৃশ্যমান উন্নয়ন একটি লোভনীয় লক্ষ্য। যে কোন সরকারই এর দিকে ধাবিত হবে, এটাই স্বাভাবিক; আবার রাজনৈতিক বিরোধীদল বিরোধীতা করবে, এই টানা-পোড়নের মধ্যে একটি বিশ্বাস যোগ্য মধ্যস্থতাকারীর বিশেষ ভূমিকা রাখার এখনই শ্রেষ্ট সময়। দূষণ রোধে সচেতনা বৃদ্ধি ও পরামর্শ প্রদানের জন্য শিক্ষকদের অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ সোলায়মান হায়দার বলেন, বাংলাদেশে ব্যাপক জনসংখ্যা এবং আর্থসামাজিক কর্মকাণ্ডের কারণে প্রতিবেশ ব্যবস্থা এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বিশেষত পানি, বায়ু এবং প্রতিবেশের উপর চাপ তৈরি হচ্ছে। জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ ছাড়া পরিবেশ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত দুরূহ। সে প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী, সরকারি-বেসরকারি এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রকৃতি এবং পরিবেশ সংরক্ষণ করতে হলে পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে টেকসই পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। প্রাত্যহিক জীবনে আমাদের সকলকে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, শব্দ দূষণ এবং প্লাস্টিক দূষণ থেকে বিরত থাকার লক্ষ্যে সক্রিয় হতে হবে। জীববৈচিত্র্য যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে আমাদের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করতে হবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. এস. এম. মনজুরুল হান্নান খান বলেন, পরিবেশের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ জরুরি নয়। আমাদের সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করা জরুরি। তা হলেই নিশ্চিত হবে প্রকৃতির ঐক্যতান টেকসই জীবন।

ইকো সোসাইটির প্রধান নির্বাহী এস. আরিফ আহমেদ বলেন পরিবেশ দূষণ রোধে সরকারী -বেসরকারী পর্যায়ে আরো বেশি করে নানাবিধ সচেতনতা বিষয়ক কার্যক্রম গ্রহণে উদ্যোগ নিতে হবে। সারাদেশব্যাপি ভলেন্টিয়ার টিমওয়ার্কের মাধ্যমে সকলের মাঝে এই বিষয়ে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে।

ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিজ এর নির্বাহী সমন্বয়ক সোহানুর রহমান বলেন, পরিবেশ দূষণ রোধে ও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ঝুঁকি মোকাবেলায় তরুন প্রজন্মকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।

উক্ত সভায় স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ক্যাপসের গবেষণা সহকারীগণ সহ ১৬টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অংশগ্রহনণ করেন।

 

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top