দিন প্রতিদিন ডেস্ক :
খাবারের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে মেসবাসী
খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ ও মেসে থাকা মানুষের খাবার প্লেটে সবজিনির্ভরতা বাড়ছে। ছবিটি মগবাজার এলাকার একটি মেস থেকে তোলা। মাস আগেও আমরা ৪৫ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে মিল (এক বেলার খাবার) চালিয়েছি। এখন এই টাকায় ডিম, আলু আর ডাল দিয়েও মিল চালানো সম্ভব নয়। এখন ৭০ টাকায়ও ভালো মিল হচ্ছে না।’ রাজধানী ঢাকার হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন গত রবিবার শান্তিনগর বাজারে কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে কথা বলেন।
পাশের শান্তিবাগ এলাকার একটি মেসে থাকেন তিনি। ফরহাদ জানান, প্রতিদিন একজন মেস সদস্যকে কমপক্ষে দুটি করে মিলের খরচ মেটাতে হয়। এই দুটি মিলের জন্য একজন মেস সদস্য এখন ১৪০ টাকা খরচ করছেন। মাসে সব মিলিয়ে (যিনি রান্না করেন তাঁর মজুরিসহ) ব্যয় হচ্ছে চার হাজার ২০০ টাকা।
দুই মাস ধরে তাঁদের মেস সদস্যদের খাবারের জন্য অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত আগস্ট মাসে ব্রয়লার মুরগির দাম তার আগের মাসের (জুলাই) তুলনায় ৯.৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। মূল্যবৃদ্ধির তালিকায় ছিল আলু ও পাম অয়েল। এ ছাড়া গত মাসে টিসিবির তালিকাভুক্ত ১৬টি মসলা পণ্যের মধ্যে ১১টিরই দাম সর্বোচ্চ ৭০.৫৯ শতাংশ (পেঁয়াজ) থেকে সর্বনিম্ন ২.৪৪ শতাংশ (এলাচ) বৃদ্ধি পায়।
এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাবে বাড়তি ব্যয় শুরু হয়। অতিরিক্ত ব্যয় সামাল দিতে খাদ্যতালিকা থেকে মাছ-মাংস বাদ দিতে শুরু করেছে অনেকে।
সাধারণ খাবারের তালিকায় ডিম ও ডালে আমিষের চাহিদা এবং আলু ও ভাতে শর্করার চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে মানুষের। ফলে এ খাবারকে প্রায় সুষম খাবার বলে থাকেন পুষ্টিবিদরা। সুষম ও সাধারণ খাবারের দাম সবার সাধ্যের মধ্যে রাখার কথা বলেছেন তাঁরা।ফকিরাপুলের একটি মেসের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম পেশায় গ্রাফিকস ডিজাইনার। এই তরুণ তাঁর স্বল্প বেতনের সঙ্গে খাবার খরচের হিসাব মেলাতে পারছেন না। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দুই মাস ধরে খাবারের খরচটাকে ধরতে পারতেছি না। ডিম-আলু খাইয়াও আগের বাজেটে ফিরতে পারি নাই। চলা এখন কষ্ট হইয়া যাইতেছে।’সাইফুলদের মেসের আরেক সদস্য জুয়েল মিয়া। তিনি চলতি মাসে ১২ সদস্যের মেসটির ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর দেওয়া তথ্য মতে, দৈনিক প্রতি মিল বাবদ ৬৫ টাকা জমা দেন মেস সদস্যরা। দুই মাস ধরে এমন খরচ হচ্ছে। মিলপ্রতি খরচ বেড়েছে অন্তত ১৫ টাকা।জুয়েল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডাল আর ভাত দিয়া কোনো রকম পেট ভরি। আগে প্রতি মাসে দুইবার গরুর মাংস খাইতাম, এখন একবার খাই। মুরগির মাংস খাই সাত দিন। মাঝেমধ্যে পাঙ্গাশ মাছ খাই।’
রাজধানীর বিভিন্ন মেসবাসীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত দুই মাসে প্রতিটি মিলের খরচ বেড়েছে অন্তত ২৭ শতাংশ। রবিবার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেছে, গত আগস্ট মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল রেকর্ড ১২.৫৪ শতাংশ।
রাজধানীর দনিয়া ক্লাবসংলগ্ন একটি মেসের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হয়। মেসটির ২৫ সদস্যের সবাই রিকশাচালক। তাঁদের মেসের ম্যানেজার কিরণ বলেন, ‘আমাদের মিল মানে ডাল-আলু-ডিম। মাংস খাইতে গেলে কারো পকেটে টাকাই থাকব না। আমাদের আয়ও নরমাল, মিলও নরমাল।’মেসের আরো কয়েকজন সদস্য জানান, কয়েক মাস আগে এই নরমাল মিলের দাম ছিল ৪০ টাকা। বাজারে এখন ১৫ টাকা একটা ডিম, এক কেজি আলু ৪৫ টাকা এবং ১০৫ টাকায় এক কেজি ডাল বিক্রি হচ্ছে। মেস ম্যানেজারকে তাই নরমাল মিলের দাম পরিশোধ করতে হচ্ছে ৫৫ টাকা। এর সঙ্গে সবজি যুক্ত হলে লাগছে ৬০ টাকা।
মেসটির সদস্য রমজান আলী বলেন, ‘একটা ডিম-আলু আর ডাইল-ভাত এখন ৬০ টাকা। গরিব মানুষ খাইবডা কী?’
টিসিবি বলছে, গত মাসের তুলনায় গতকাল সোমবার আলু আর বড় দানার মসুর ডালের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১৪.৪৪ ও ৫.২৬ শতাংশ। নিম্নবিত্তের খাদ্যতালিকার প্রধান এই দুই উপাদানের মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে কয়েক মাস ধরে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) নির্বাহী পরিচালক ডা. তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘ডাল ২০-২৫ শতাংশ প্রোটিন (আমিষ) সরবরাহ করে। শর্করা-আমিষ মিলিয়ে একটি সুষম খাদ্যের তালিকায় এটি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের লক্ষ রাখা উচিত, সুষম খাদ্যতালিকার উপাদানগুলো যেন মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে। সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে চাল, আলুর মতো ডাল উৎপাদনে যেন আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকতে পারি।’