নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে জুয়াড়ি সিন্ডিকেটের চক্রের দাপটে অসহায় বিভিন্ন মহল। দেদার চলছে জুয়ার রমরমা ব্যবসা, প্রতিদিন লুটেপুটে খাচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। হতাশ নগরবাসী।
বিগত কয়েক বছর ধরে একটি অপরাধী চক্র সিন্ডিকেট করে রাজধানীর বিভিন্ন গ্যারেজে , ব্যস্ততম রাস্তা, দোকানপাট, অলিগলিতে ও সরকারি ভ‚মিতে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে জুয়ার আসর তৈরি করে নগরীকে কলুষিত করছে।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে যাত্রাবাড়ীর জুয়ার বোর্ড পরিচালনায় মূলহোতার নাম মোঃ সবুজ।সবুজের নেতৃত্বে যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর ও কদমতলীর বিভিন্ন পয়েন্টে জুয়ার আসর পরিচালনা করে আসছে।পুলিশ প্রশাসন ও নিরব ভূমিকায়।
যাত্রাবাড়ীর কাজলা ব্রীজের পাশের জাহাঙ্গীরের রিকশার গ্যারেজে রমরমা জুয়ার আসরের তত্ত্ব বেরিয়ে আসে অনুসন্ধানে।
স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেই চলে এসব অপরাধ। তাই অপরাধী চক্রের অপরাধ দেখেও নীরব ভূমিকা পালন করছেন কর্তৃপক্ষ ।
জুয়াড়ি চক্র প্রকাশ্যে দিবালোকে এইসব স্পটে দুপুর ১ ঘটিকা থেকে মধ্যেরাত পর্যন্ত শীলং তীর, তিনতাস, জান্ডু-মুন্ডু, নামক বোর্ড বসিয়ে রমরমা জুয়ার ব্যবসা চালানোর কারণে জুয়ায় আসক্তে নিম্ন আয়ের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উৎসাহিত হচ্ছে। এসব কারণে একদিকে যেমন বাড়ছে সামাজিক বিশৃঙ্খলা, অন্যদিকে বাড়ছে পারিবারিক বিবাদ-কলহ, চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ড।
নগরীতে সরেজমিন ঘুরে সাধারণ মানুষ ও বোর্ড মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, মিডিয়া কর্মী এবং স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই এ ব্যবসা চালায় অপরাধী জুয়াড়ি চক্র।
তারা আরো বলেন, সহযোগিতা না পেলে কীভাবে জুয়ার ব্যবসা চালাব। আমাদের বিরুদ্ধে লিখে আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবেন না।
এ ব্যপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জুয়াড়ি বলেন, সারাদিন যে টাকা ইনকাম করি সেই টাকা দিয়া সংসার চলে না। তাই বাড়তি আয়ের জন্য খেলতে আসি। মাঝে মাঝে পাই কিন্তু সবসময় দান পাই না। আবারো পাওয়ার আশায় প্রতিদিন খেলি। তিনি আরো বলেন,সবুজ ভাইয়ের বোর্ডেই জুয়া খেলেছি, খেলতে গিয়ে অনেক সময় খালি হাতে বাসায় যাই, তখন বাসায় ঝগড়া-বিবাদ হয়। অনেক টাকা নষ্ট করেছি ভাই, সেই টাকা তুলতে গিয়ে খাদের কিনারে চলে এসেছি।
ভুক্তভোগীরা বলেন, রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন কিছু করার থাকে না। খোদ প্রশাসনই জুয়া বন্ধ করতে পারছে না। গরিব মানুষগুলো ফকির হয়ে যাচ্ছে আর জুয়ার বোর্ড মালিকরা প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
এসব জুয়ায় নগরীর টোকাই, ভিক্ষুক, নিন্ম এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির ঠেলাচালক, ভ্যানচালক, রিকশাচালক, সিএনজি চালক, বাসচালক, মাইক্রোবাস চালক, ট্রাকচালক, পিকআপ চালক, হেলপার, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র, বেকার যুবক, বিভিন্ন কলোনির বিধবা মহিলা, কাজের বুয়া এবং তাদের সন্তানরা রাতারাতি বড়লোক হওয়ার লোভে এসব জুয়ার আসরে সারাদিনের ইনকাম বিনিয়োগ করে দিনশেষে প্রতারিত হয়ে খালি হাতে বাসায় ফেরে।
ফলে একদিকে যেমন বাসায় অশান্তি-কলহ সৃষ্টি হয়, অন্যদিকে পরিবারের আহার জোগাতে চুরি-ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ে এসব জুয়াড়িরা। তাই সিলেট মহানগরীতে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
এই ক্যাসিনো জুয়ার বোর্ড, মাদক বানিজ্য, ও দেহ ব্যবসা পরিচালনার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠেছে।স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের নেতা তাদের নিয়ন্ত্রন করে থাকে। ক্যাসিনোর এজেন্ট বলে কথিত জনৈক মোঃ সবুজের হাত ধরে বহু লোক প্রতিনিয়ত ঐ ক্যাসিনো বোর্ডে হাজির হচ্ছেন। স্কুল কলেজের সুন্দরী নারীরাও ঐ জুয়ার আসরের আড়ারে অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে, তারাই নানা কৌশলে ধর্নাঢ্য ব্যাক্তিবর্গের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
যাত্রাবাড়ী জুয়া বোর্ডের মূলহোতা সবুজ সহ ২০ জনকে ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর গোপন সংবাদের উপর ভিত্তি করে এডিসি দ্বীন মোহাম্মদের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয়,এবং ওই সময় তাদের অভিযানে এক পুলিশ সদস্য ও আহত হয়।তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিনের শেল্টারে পরিচালিত হতো।
ক্যাসিনো সম্রাট ও জুয়া বোর্ডের পরিচালনাকারী মোঃ সবুজের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি মুঠোফোনে বলেন,আমি এখন একটা বিচারে আছি পরে আপনার সাথে কথা বলবো।বোর্ড পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান,একটি ঝামেলার কারনে বোর্ডটি এখন বন্ধ রয়েছে বলে তিনি কলটি কেটে দেন।
যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মফিজুল ইসলামের
সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এই জুয়ার আসরগুলোতে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।আপনারা তথ্য দিয়ে সাহায্য করুন।আমরা আরো কঠোরভাবে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ ব্যপারে ওয়ারী বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার জিয়াউল আহসান তালুকদারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায় নি।