মে দিবস কেন পালন করা হয় ও তার গুরুত্ব

received_1253268608966793.jpeg

রিপোর্টার,মো: আব্দুল হামিদ:-
বিশ্বজুড়ে আজ উদযাপিত হচ্ছে মহান মে দিবস। শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন হিসেবে পালন করা হয় এই দিবসটিকে। মূলত প্রতি বছর ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে পালন করা হয়।

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবেও চিহ্নিত এই দিনটির ইতিহাস সম্পর্কে অনেকেরই জানা নেই। দেখে নেওয়া যাক, কেন পালন করা হয় এই দিবসটি। আর এই এই দিবসের তাৎপর্যই বা কী?

১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটে ন্যায্য মজুরি এবং দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি চালালে অনেক শ্রমিক হতাহত হন। আর এরপর থেকেই এই দিনটি পালিত হয়ে আসছে মে দিবস বা শ্রমিক দিবস হিসেবে।

মূলত সেই ঘটনার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালন করা হয়। যদিও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষে এই দিবসটি পালন করা হচ্ছে ১৯২৩ সাল থেকে।

১৮৮৬ সালে শিকাগো শহরের হে মার্কেটে নিহতদের আত্মত্যাগকে মনে রেখে এই দিবসটি পালিত হয়। সেদিন দৈনিক ৮ ঘণ্টার কাজের দাবিতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত হয়েছিলেন। তাদের ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি কেউ একজন বোমা নিক্ষেপ করেন। আর এরপর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে।

ফলে অনেক শ্রমিক ও পুলিশ হতাহত হয়। ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসে ১৮৯০ সাল থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। সেখান থেকেই আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের সূচনা হয়। আর ১৮৯১ সালে প্যারিসেই দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। স্বীকৃতি পায় মে দিবস।

এরপর ১৯০৪ সালে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পহেলা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সকল গণতান্ত্রিক দল এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

সেই সম্মেলনে সব শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে ‘বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার’ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লবের পর থেকে বিপুল সমারোহে দেশটিতে মে দিবস উদযাপিত হতে থাকে। এই উপলক্ষে দেশটিতে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হতো।

অবশ্য যে দেশে ঘটেছিল হে মার্কেটের ঘটনা, সেই যুক্তরাষ্ট্র ও এর পাশাপাশি কানাডায় মে দিবস পালিত হয় না। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সোমবার ‘লেবার ডে’ বা শ্রমিক দিবস পালন করে ওই দুই দেশ। তবে মে দিবসে সরকারি ছুটি থাকে অন্তত ৮০টি দেশে। এর মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে।

এছাড়া আরও অনেক দেশে এটি বেসরকারিভাবে পালিত হয়। অন্য বছরের মতো শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ে শ্রমিকদের আত্মত্যাগের এই দিনকে এবছরও পালন করছে বাংলাদেশ। এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’। মহান মে দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।

এদিকে মে দিবস আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শ্রমিক শ্রেণির মাঝে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। মালিক-শ্রমিক সম্পর্কে এই দিবসের তাৎপর্য ও প্রভাব সুদূরপ্রসারী। এর ফলে শ্রমিকদের দৈনিক কাজের সময় নেমে আসে ৮ ঘণ্টায়।

সারা বিশ্বের শ্রমিকরা তাদের শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা পেতে শুরু করেন। নিজেদের অধিকার আদায়ে সফল হয়েছেন। বিশ্বের ইতিহাসে সংযোজিত হয় সামাজিক পরিবর্তনের নতুন অধ্যায়। মে দিবসের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শ্রমজীবী মানুষের যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচনা হয়, তার ফলে ধীরে ধীরে লোপ পেতে শুরু করে সামাজিক শ্রেণি-বৈষম্য।

শ্রমিকদের বৈষম্য এখনও পুরোপুরি নির্মূল করা না গেলেও মে দিবসের সেই আত্মত্যাগ নিপীড়িত শ্রমজীবী মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে অনেকটাই মুক্ত করেছে।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top