ছাতক কংক্রিট শ্লীপার কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ১২ দিনে উৎপাদন হয়েছে কয়েক ঘন্টা।।

received_1363064450952424.jpeg

মোঃ আবু বকর, সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :-
ছাতকে রেলওয়ের অধীনে দেশের একমাত্র সরকারি কংক্রিট শ্লীপার কারখানাটি একদিন চালু হয়ে আবারো বন্ধ হয়ে গেছে। কংক্রিট শ্লীপার কারখানা চালুর নামে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা আত্মসাত করে কারখানাটি ঘষা-মজা করে গত ১৬ অক্টোবর চালু করা হয়। ওই দিন কয়েক ঘন্টায় কিছু নিম্নমানের শ্লীপার উৎপাদন করে কারখানাটি আবারো বন্ধ হয়ে পড়ে। প্রায় ৬ মাস ধরে কারখানাটি চালু করতে উদ্যোগ নিয়ে কারখানা সংস্কার সহ কাচামাল সংগ্রহের কয়েকটি টেন্ডার আহবান করে কর্তৃপক্ষ। ওই সব টেন্ডার কারখানার কর্মকর্তারাই বিভিন্ন নামে গ্রহণ করে শ্লীপার কারখানার কিছু যন্ত্রাংশে রং-বার্ণিশ করে টেন্ডারের ৯০ ভাগ টাকা আত্মসাত করেছে। কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দিয়েছিলেন ১৫ অক্টোবর শ্লীপার কারখানাটি চালু করবেন। কিন্তু শত চেষ্টার পরও ওই দিন কারখানা চালু করা সম্ভব হয়নি। পরদিন কিছু সময় কারখানাটিতে উৎপাদন হয়েছে। ১৭ অক্টোবর ২/৩ ঘন্টা উৎপাদন হবার পর এই কারখানা আবারো বন্ধ হয়ে যায়।

ছাতক রেলওয়ের অসাধু কিছু কর্মকর্তা- কর্মচারীরা ঠিকাদারির নামে এই কারখানা সহ ছাতক রেলওয়েতে হরিলুট চালিয়ে যাচ্ছেন। অনিয়ম ও দুর্ণীতির কারণে দেশের একমাত্র সরকারি এই কংক্রিট শ্লীপার কারখানাটি উৎপাদন থেকে বার-বার মুখ থুবড়ে পড়ছে। ১৯৮৮ সালের ২৭ অক্টোবর দৈনিক ২৬৪ পিছ শ্লীপার উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে ছাতকে কংক্রিট শ্লীপার কারখানাটি উৎপাদন শুরু করে। ২০০০ সাল পর্যন্ত টানা উৎপাদনে ছিলো এই কারখানাটি।

এরপর থেকেই অনিয়ম- দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে এটির উৎপাদন বার-বার বন্ধ হয়ে পড়ে। ২০১২,২০১৪ ২০১৬ ও ২০২০ সাল সহ কয়েক বার কারখানাটি চালু করা হলেও এর স্থায়িত্ব বেশিদিন টিকেনি। কিছুদিন চালু থাকার পর তা আবারো বন্ধ হয়ে পড়ে। যান্ত্রিক ত্রুটি, কাঁচামাল সঙ্কট,বিভিন্ন ধরনের লুটপাট সহ নানা অজুহাতে বছরের বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে বাংলাদেশ রেলওয়ের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাতক কংক্রিট শ্লীপার কারখানা।

মাঝে-মধ্যে কংক্রিট শ্লীপার কারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়ে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বিভিন্ন টেন্ডার আহ্বান করা হয়। আর এসব টেন্ডার নিয়েই ঘটে লংকাকান্ড।রেলওয়ের কর্মকর্তারা এসব টেণ্ডার নিজেদের লোকের নামে নিয়ে শুরু করেন লুটপাট। টেন্ডার কিনে ও আনেন তারা এমন অভিযোগ রয়েছে ছাতক রেলওয়ে কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। বর্তমানে ছাতক রেলওয়ে ও কংক্রিট শ্লীপার কারখানা কর্মকর্তা শুন্য। দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা থাকেন ঢাকা ও সিলেটে।

ছাতক রেলওয়ের ফোরম্যান মাহবুবুর আলম যোগদান করার প্রথম থেকেই তিনি ছাতকে থাকেন নি। কর্মস্থলে না থেকে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি বেতন -ভাতা ভোগ করছেন এমন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। কিন্তু এখানের কোন টেন্ডার হলে তিনি তা বাগিয়ে নেন। কংক্রিট শ্লীপার কারখানা চালুর জন্য সম্প্রতি একটি টেন্ডার করা হয়েছে রেলওয়ের পুর্বাঞ্চলীয় জোন থেকে। প্রায় ২৭ লক্ষ টাকার দুটি টেন্ডারের কার্যাদেশ পায় পিরোজপুর এলাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওই কাজটিও উপ ঠিকাদার হিসেবে বাগিয়ে নিয়ে কোন কাজ না করেই (ফোরম্যান) মাহবুবুর আলম,(এলডিএ) মাহমুদ আলম
উর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে নিয়ে ভাগ বাটোয়ারা করেছেন। কারখানার পুরানো মালামাল নতুন টেন্ডারের আমদানি দেখিয়ে লক্ষ-লক্ষ টাকা আত্মসাত করেছে রেলওয়ের ওই চক্র। যার ফলে কারখানাটি আজ অচল ও বন্ধ।

কারখানায় স্থাপিত মিস্কারমেশিন কেনার জন্য ১৮ লক্ষ টাকার টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু মাহবুবুর আলম ১০/১৫ হাজার টাকা মুল্যের একটি নতুন প্যানেল বোর্ড বসিয়ে এবং পুরাতন মিস্কারমেশিন রেলওয়ের আমির হোসেন, আবু বক্কর ও সেলু বড়ুয়াকে দিয়া সংস্কার করে রং-বার্নিশ করে কারখানা চালুর চেষ্টা করে বার- বার ব্যর্থ হচ্ছেন।

৬ টি ব্রাইবেডার মোটর ক্রয়ের ও টেন্ডার হয়েছে ৯ লক্ষ টাকায়। এসবের বাজার মুল্য ৩০-৩৫ হাজার টাকা করে। তবে টেন্ডারে প্রতিটির মুল্য ধরা হয়েছে এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। মাহবুবুর আলম সহ ছাতক রেলওয়ের একটি চক্র কংক্রিট শ্লীপার কারখানার পুরনো ৬ টি বাইবেডার মোটর বার্ণিশ রিপিয়ারিং করে নতুন বলে চালিয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যে এক উর্ধতন কর্মকর্তাকে ও ম্যানেজ করে সকল বিল ও তারা উত্তোলন করে নিয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানিয়েছে। জানায়।

স্থানীয় বাসিন্দা চাঁন মিয়া চৌধুরী সহ একাধিক লোক জানান,ঢাকা,সিলেট ও ছাতক মিলে একটি সিন্ডিকেট ছাতক রেলওয়ে লুটেপুটে খাচ্ছে। এ চক্রের সদস্যরা একাধিকবার এখান থেকে বদলী হলে ও তাদেরকে লুটপাটের জন্য এখানেই টিকিয়ে রাখছেন এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা। এখানের লুটপাটের লক্ষ লক্ষ টাকা ঢাকা ও সিলেটে ভাগ বাটোয়ারা হচ্ছে। ছাতকবাজার রেলওয়ের ফোরম্যান ও একজন এলডিএ লুটপাটকারী চক্রের সাথে জড়িত।

ছাতক রেলওয়ের প্রধান অফিস সহকারি সুরঞ্জন দাসের সাথে এ ব্যাপারে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান,গত ১৫ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত কারখানায় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কয়েক ঘন্টা উৎপাদন হয়েছে।স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন সংস্কার কাজ চলছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সিলেটের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (ছাতকে অতিরিক্ত দায়িত্ব) আজমাইন মাহতাব, ছাতক কংক্রিট শ্লীপার কারখানা বন্ধ রয়েছে স্বীকার করে জানান, টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে কারখানা চালু করা হবে।রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ ঢাকা (অতিরিক্ত দায়িত্ব ছাতক) সিরাজ জিন্নাত বলেন, সাময়িক সমস্যার কারণে কারখানাটি বন্ধ আছে। সংস্কার কাজ চলছে ৬/৭ দিনের মধ্যে শ্লীপার কারখানা চালু হবে।##

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top