গাজী ইব্রাহিম খলিল:-
এককালের দাপুটে জমিদারদের বসবাসের বাড়িগুলোই বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসাবে খুঁজে পাওয়া যায়। কালের বিবর্তনে টিকে থাকা তেমনি এক শতবর্ষী জমিদার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রুপগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি (Murapara Jamidar Bari) বা মঠেরঘাট জমিদার বাড়ি। যা বর্তমানে টিকে থাকা জমিদার বাড়িগুলোর মধ্যে বেশ আকর্ষণীয়। ডে আউটিং বা দিনে ঘুরতে গিয়ে দিনেই ফিরে আসবার জন্য মুড়াপাড়া হতে পারে আদর্শ নির্বাচন।
১৮৮৯ সালে প্রায় ৬২ বিঘা জমির উপর বাবু রামরতন ব্যানার্জী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই জমিদার বাড়িটি বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে বাবু রামরতন ব্যানার্জীর বংশধরেরা মূল ভবনের সামনের ও পেছনের অংশ সম্প্রসারণ, পুকুর খনন ও দালানের উঁচুতলার কাজ করেছেন। মুড়াপাড়া জমিদার বাড়িতে কারুকার্যমন্ডিত ৯৫ টি কক্ষ, মন্দির, ভান্ডার, কাছারি ঘর, অতিথিশালা ও বৈঠকখানা, আস্তাবল, দৃষ্টিনন্দন নাচের ঘর এবং সামনে ও পিছনে দুইটি পুকুর রয়েছে। ভবনের প্রবেশের মুখে বিশাল ফটক জমিদার বাড়ির বিশালতার আভাস দেয় আগে থেকেই। এছাড়া দালানের মন্দিরের চূড়াটি প্রায় ৩০ ফুট উঁচু।
১৯৪৭ সালে ভারত উপমহাদেশ বিভক্ত হবার পর জমিদার পরিবারের সকলে কলকাতা চলে যান, তখন বাড়িটি কিছুদিনের জন্য পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকে। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার এখানে কিশোরী সংশোধন কেন্দ্র ও হাসপাতাল চালু করে। পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালের দিকে ভবনটি স্কুল-কলেজের কাজ পরিচালনা করবার জন্য ব্যবহার করা হতো। ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর মুড়াপাড়া জমিদার বাড়িটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার তালিকাভুক্ত করে। বর্তমানে মুড়াপাড়া জমিদার বাড়িতে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে, যা সরকারি মুড়াপাড়া কলেজ নামে পরিচিত।
কিভাবে যাবেন
ঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্তান বা যাত্রাবাড়ি বাস টার্মিনাল থেকে বাসে করে (মেঘলা, আসিয়ান বা গ্লোরি) করে ভুলতা বা রূপসী বাসস্ট্যান্ডে যেতে হবে। নরসিংদী ও ভৈরবগামী বাসে ভুলতা এসে সেখান থেকে রিকশা বা সিএনজিতে (জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়া) দিয়ে সরাসরি মুড়াপাড়া জমিদার বাড়ি যাওয়া যায়।
আবার অন্য পথে, কুড়িল ফ্লাইওভারের নিচ থেকে জনপ্রতি ৬০ টাকা ভাড়ায় কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত এসে। কাঞ্চন ব্রিজের কাছে জনপ্রতি ৪০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় রূপগঞ্জ শীতলক্ষ্যা ফেরিঘাটে পৌছে ফেরী পার হয়ে রিকশা বা অটো নিয়ে জমিদার বাড়িতে যেতে পারবেন।