গাজী ইব্রাহিম খলিল:-
নারায়ণগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে চলে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন উত্তর দিকে সোনারগাঁও এবং দক্ষিণ দিকে মোগড়াপাড়ার অবস্থান। মোগরাপাড়ার মেইনরোড ধরে ৪ কিলোমিটার দূরে সাচিলপুর গ্রামে সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের সমাধি (Tomb of Sultan Gias Uddin Azam Shah) অবস্থিত।
কালো পাথরে তৈরি সমাধিটি ৩ মিটার লম্বা, ১.৫০ মিটার চওড়া এবং ৯০ সেন্টিমিটার উঁচু। ৩ ধাপ বিশিষ্ট কবরের সবার নিচের ধাপটি সাদামাটা পাথুরে একটি পাটাতন, মাঝের অংশটি কারুকার্যময় বাক্সের আকারে তৈরী আর উপরের ধাপটি নৌকার ছৈয়ের মত করে নির্মাণ করা হয়েছে। মাঝের ধাপের কারুকাজগুলো এক সারি খোপে আবদ্ধ এবং প্রতিটি খোপে একটি করে ভাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। প্রতিটি খিলানের চূড়া হতে ঝুলে থাকা শেকলের ডগায় পদ্ম-দোলক শোভা বাড়িয়েছে। এছাড়া মূল সমাধির কার্নিশে সূক্ষ্ম কারুকার্যময় অলঙ্করণ, দুইপাশে তিনটি করে তিন খাঁজবিশিষ্ট খিলান, প্রলম্বিত শিকল ও ঝুলন্ত ঘণ্টার নকশা দেখতে পাওয়া যায়। যা আমাদের দেশে প্রাপ্ত এক বিরল স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৩৮৯ সালে গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সিংহাসন লাভ করেন। তাঁর রাজত্বকালে অত্র অঞ্চলে শিক্ষা-দীক্ষা, সাহিত্য, চারুকলা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ উন্নতি সাধিত হয়। তিনি ছিলেন ন্যায় বিচারক ও বিচক্ষণ এক শাসক। ফলে দেশ বিদেশে তাঁর চর্চা হতে থাকে এবং পারস্যের বিখ্যাত কবি হাফিজের সাথে ছিল তাঁর অসীম বন্ধুত্ব। প্রায় ২২ বছরের রাজত্বের পর ১৪১০ খ্রিষ্টাব্দে গুপ্তঘাতকের হাতে তাঁর প্রাণনাশ ঘটে। সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহের মৃত্যুর সাথে ইলিয়াস শাহী বংশের গৌরবোজ্জল অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটে।
কিভাবে যাবেন?
রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান থেকে বাসে মোগরাপাড়া চৌরাস্তা নেমে সিএনজি বা রিকশা ভাড়া করে সরাসরি সাচিলপুর গ্রামে অবস্থিত গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের সমাধি/মাজার যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন?
ঢাকার কাছে অবস্থানের কারণে গিয়াসিউদ্দিন আজম শাহের সমাধি দেখে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসা যায়। প্রয়োজনে রাতে থাকতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সদরে অবস্থিত আবাসিক হোটেলগুলোতে যোগাযোগ করতে পারেন।