মো:ফিরোজ,বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
সুরের মূর্ছনায় সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়,পটুয়াখালীর বাউফলের কালাইয়া বন্দরে হেঁটে হেঁটে বাঁশিতে সুর তুলছেন বংশীবাদক জগদিস চন্দ্র শীল (৬৯)।বাঁশের বাঁশির সুরে ভেসে আসছে পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের লেখা ‘আমার হাড় কালা করলাম রে, আমার দেহ কালার লাইগা রে’ গানের কথা। পথচারীরা দাঁড়িয়ে তার বাঁশির সুর শুনছেন। কেউ কেউ আবার বাঁশিও কিনছেন। বিক্রির টাকায় চলে বংশীবাদক জগদিস শীলের চার সদস্যের সংসার। বলা যায়, ‘বাঁশির সুরে জীবন চলে’ তার।
হাটে বাঁশি বাজানো ও বিক্রির ফাঁকে ফাঁকে জগদিস শীলের আলাপচারিতা হয় প্রতিনিধির সাথে।
আলাপচারিতায় জানা যায়, বরগুনা জেলার বেতাগী পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডে তার বাড়ি। বাবা কৃষ্ণ শীল ছিলেন- একজন হতদরিদ্র কৃষক। পরিবারের অভাব অনাটনের মধ্যেই জন্ম নিয়েছিলেন জগদিস শীল। দারিদ্র্যের কারণে পড়াশুনা করার সুযোগ হয়নি। ছোট বেলা থেকেই বাঁশির প্রতি দুর্বলতা ছিল। স্থানীয় এক ওস্তাদের কাছে নেয় হাতেখড়ি। ৩০ বছর বয়সে যোগ দেন যাত্রাদলে। প্রায় ৭ বছর ওই যাত্রাদলে বংশীবাদক ছিলেন।
একসময় ভেঙে যায় যাত্রাদল। বেকার হয়ে পড়েন জগদিস শীল। অন্য পেশাতে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারেননি। বাঁশিতে ফিরে আসেন তিনি। স্ত্রী রমলা রাণীকে নিয়ে শুরু করেন বাঁশি তৈরি। সেই বাঁশি নিয়ে নেমে পড়েন স্থানীয় হাটে বাজারে। অলিগলিতে হেঁটে হেঁটে বাঁশিতে সুর তুলেন। জয় করে নেন মানুষের মন। করেন বাঁশি বিক্রি।
একসময় ছেলে জয়ন্ত্র শীল (২৩) ও ছেলের বউ বন্নিকা রাণী (২০) তার বাঁশি তৈরিতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। গড়ে তুলেন পারিবারিক কুটিরশিল্প। কুমিল্লা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করেন বাঁশি তৈরির কাঁচা বাঁশ। বাঁশি বিক্রির পরিধি বেড়ে যায় তার।
স্থানীয় হাট বাজারের গন্ডি পেরিয়ে সারাদেশে শুরু পদচারণ। দেশের বিভিন্ন হাট-বাজার, শহর-বন্দর, স্কুল-কলেজ, গ্রামীণ মেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাঁশি বিক্রি করেন তিনি। এভাবেই ৩৫ বছর ধরে চলছে জগদিসের ভ্রাম্যমাণ বাঁশি বিক্রি। পনেরো টাকা থেকে শুরু করে দেড়শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয় বাঁশি। দৈনিক এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার বাঁশি বিক্রি করেন তিনি।
জগদিস চন্দ্র শীল বলেন, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলায় কেউ হাতে বাঁশের বাঁশি তৈরি করেন না। তিনিই একমাত্র বাঁশি তৈরি করেন এবং হাটে বাজারে বাঁশি বিক্রি করেন। দিন দিন বাঁশির চাহিদা কমছে। নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা বাঁশি বাজায় না, চেষ্টাও করে না। হারিয়ে যেতে বসেছে এ শিল্প। এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে একাধিক বার সরকারের কাছে সহায়তার আবেদন করেও পাননি কোনো সহায়তা।
তার অভিযোগ যারা কুটির শিল্পের সাথে জড়িত না, তারাও সরকারের সহায়তা পায়। কিন্তু তার পুরো পরিবার কুটির শিল্পের সাথে জড়িত থাকার পরেও সহায়তা থেকে বঞ্চিত ।