নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৩ সালে সারা দেশে ৬ হাজার ২৬১টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৭ হাজার ৯০২ জন। আর আহত হয়েছেন ১০ হাজার ৩৭২ জন। এ ছাড়া ওই সময় রেলপথে ৫২০টি দুর্ঘটনায় ৫১২ জন নিহত, ৪৭৫ জন আহত হয়েছেন।
আজ রবিবার সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ প্রতিবেদন তুলে ধরেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সড়ক, রেল ও নৌপথে দুর্ঘটনার সংবাদ মনিটরিং করে প্রতি বছরের ন্যায় এবারো এই প্রতিবেদন তৈরি করে সংগঠনটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত ১ হাজার ৯৫০ জন চালক, ৯৬৮ জন পথচারী, ৪৮৫ জন পরিবহন শ্রমিক, ৬৯৭ জন শিক্ষার্থী, ৯৭ জন শিক্ষক, ১৫৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, ৯৮৫ জন নারী, ৬১২ জন শিশু, ৩০ জন সাংবাদিক, ৩২ জন চিকিৎসক, ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ৮ জন আইনজীবী, ১০ জন প্রকৌশলী ও ১১১ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীর পরিচয় মিলেছে।
এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ৭৩ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। তাঁদের মধ্যে ১৬ জন সেনা সদস্য, ৪০ জন পুলিশ সদস্য, ১ র্যাব সদস্য, ৭ জন বিজিবি সদস্য, ৩ জন নৌবাহিনীর সদস্য, ৩ জন আনসার সদস্য, ২ জন ফায়ার সার্ভিস সদস্য, ১ জন এনএসআই সদস্য, ১৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা, ১৫ জন সাংবাদিক, ৬৪৭ জন নারী, ৪৬৬ জন শিশু, ৪১৬ জন শিক্ষার্থী, ৮১ জন শিক্ষক, ১ হাজার ৫২৬ জন চালক, ২৬০ জন পরিবহন শ্রমিক, ৮ জন প্রকৌশলী, ৭ জন আইনজীবী, ৭৭ জন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও ২২ জন চিকিৎসক।
এ সময়ে সংগঠিত দুর্ঘটনায় সর্বমোট ৮ হাজার ৫৫০টি যানবাহনের পরিচয় মিলেছে, যার ১৬.১৫ শতাংশ বাস, ২৪.৮৪ শতাংশ ট্রাক-পিকাপ-কাভার্ডভ্যান ও লরি, ৫.৯১ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ৫.৩৯ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ২৬.০২ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৪.৪৭ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ৭.১৯ শতাংশ নছিমন-করিমন-মাহিন্দ্রা-ট্রাক্টর ও লেগুনা সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে।
২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে দুর্ঘটনায় সংগঠিত যানবাহনের ১১.২২ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক, ২.৮২ শতাংশ বাস সড়কে দুর্ঘটনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ ছাড়া ২৪.৩৬ শতাংশ কার-জীপ-মাইক্রোবাস, ২৩.২২ শতাংশ নসিমন-মাহিন্দ্রা-লেগুনা, ২৩.০৩ শতাংশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ১৯.০৯ শতাংশ মোটরসাইকেল, ৯.৮৪ শতাংশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-লরি সড়কে দুর্ঘটনা বিগত বছরের চেয়ে কমেছে।মোট দুর্ঘটনার ৫২.৮৩ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা, ২০.৫ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৪.২৯ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে, ১১.৪ শতাংশ বিবিধ কারণে, ০.২৭ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে এবং ০.৬৮ শতাংশ ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।পরিসংখ্যানের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ৬.৭৩ শতাংশ গাড়ি চাপা, ১১.৯৯ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৩৭.০৩ শতাংশ যানবাহনের চাকায় ওড়না পেঁচিয়ে, ট্রেন-যানবাহন সংঘর্ষের ঘটনা ৩৫.০২ শতাংশ, ১৬.০৪ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনা কমেছে। এ ছাড়া বিবিধ কারণে ১৮.৩৪ শতাংশ দুর্ঘটনা বেড়েছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত এক বছরে মোট সংঘটিত দুর্ঘটনার ৩৪.৮৬ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৮.৪১ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ২৮.৫ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার ৬.৩২ শতাংশ ঢাকা মহানগরীতে, ১.১১ শতাংশ চট্টগ্রাম মহানগরীতে ও ০.৬৮ শতাংশ রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত হয়েছে।
২০২৩ সালে ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৭৩৬টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৭১২ জন নিহত, ২ হাজার ৩৮১ জন আহত হয়েছেন। চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ২৩৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ২০৫ জন নিহত, ২ হাজার ২৯৪ জন আহত হয়েছে। খুলনা বিভাগে ৭৬৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৬৪ জন নিহত, ১ হাজার ৭৮ জন আহত হয়েছেন।
এ ছাড়া বরিশাল বিভাগে ৩৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭৯ জন নিহত, ৯৯২ জন আহত হয়েছেন। ময়মনসিংহ বিভাগে ৪১৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৪ জন নিহত, ৬৬৫ জন আহত হয়েছেন। সিলেট বিভাগে ৩৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪০৩ জন নিহত, ৯২৬ জন আহত হয়েছেন। রংপুর বিভাগে ৫৬৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬২৬ জন নিহত, ৮৬৮ জন আহত হয়েছেন ও রাজশাহী বিভাগে ৭৮৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭৯৩ জন নিহত এবং ১ হাজার ১৬৮ জন আহত হয়েছে।
এসব দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে ১৭ জানুয়ারি। এদিন ৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়েছেন। ২৬ মার্চ সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। এদিন ৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি নিহত হয়েছে ৭ জুলাই। ওইদিন ৩০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১ জন নিহত ও ৯৮ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছেন ৪ মার্চ। এদিন ২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত ও ১৪৮ জন আহত হয়েছেন।