মোঃ আবু বকর,সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় নরসিংপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিরেন্রনগর হয়ে রহিমের পাড়া যাওয়ার কাঁচা রাস্তাটি ৫২ বছরে ও পাকা করণ হয়নি। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো রাস্তা।নরসিংপুর থেকে রহিমেরপাড়া যাওয়ার ঘিলাছড়া আরশ আলীর বাড়ি থেকে কাঁচা রাস্তাটিতে দুর্ভোগ নিত্যদিনের। সেই রাস্তাটি ব্যবহারকারীরা বলছেন, একদিনের বৃষ্টিতে ৫ থেকে ১০ দিন চলার অনুপযোগী হয়ে থাকে। রাস্তার এই দুদর্শায় ১২থেকে১৪টি গ্রামের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। দেশ স্বাধীনের ৫২ বছর পার হলেও প্রতিশ্রুতিতেই আটকে আছে কাঁচা রাস্তাগুলো পাকা করার দাবি।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তাটিতে মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলাচল করে না। রহিমের পাড়া থেকে শারপিন নগর ভাংগাবাড়ী রাস্তা,রহিমের পাড়া থেকে ঘিলাছড়া ভায়া বিরেন্দ্রনগর রাস্তা,ঘিলাছড়া থেকে হাদাচানপুর ভায়া বিরেন্দ্রনগর রাস্তা,বিরেন্দ্রনগর থেকে চাইরগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভায়া খাইরগাও রাস্তা,নাছিমপুর বাজার থেকে মন্তাজনগর যাতায়াতের রাস্তা,নেতরছই পয়েন্ট থেকে ব্রিটিশ সড়ক ভায়া জুয়াইর গাও মাষ্টার বাড়ি রাস্তার অবস্থা খুবই নাজুক চলাফেরা করা কষ্টকর।
স্থানীয়রা বলছেন সড়কগুলোর বেহাল দশার কারণে স্বাস্থ্যসহ অনেক সুবিধা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন এলাকাবাসী গন।
জুয়াইরগাও গ্রামের সৈয়দ আহমেদ বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর ধরে অল্প কিছু মাটি ভরাট, মাপজোক ও সয়েল টেস্ট ছাড়া রাস্তার কোনো দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখতে পাইনি। এই যুগে বাংলাদেশের আর কোথাও এমন রাস্তা দেখা যায় না। আমরা বছরের পর বছর মানববন্ধন করেছি এবং রাস্তা নির্মাণের দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি।’
খাইরগাও গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হেকিম বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমে রাস্তাটির এমন দশা হয় যে, আমরা পায়ে হেঁটেও নাছিমপুর বাজার পৌঁছাতে পারি না।’
শারপিন নগর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালেক বলেন, কাঁচা রাস্তার জন্য নরসিংপুর ইউনিয়নের পূর্বাঞ্চলের গ্রামগুলো এখনো পিছিয়ে আছে। আধুনিক যুগে বাস করেও এই গ্রামের মানুষ জরুরিভিত্তিতে কোনো রোগীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে পারে না। কৃষকরাও তাদের উৎপাদিত শাক সবজি নিয়ে দূরের বাজারে যেতে পারে না।’
এই রাস্তায় চলাচলকারী মোটরসাইকেল চালক সফিকুল ইসলাম বলেন, মোটরসাইকেল নিয়ে এ রাস্তা দিয়ে চলাচল করাটা খুবই কষ্টের, দুর্ভোগের। কাদা মাড়িয়ে চলতে হয় বলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, কাচা রাস্তাগুলো পাকাকরণ না হওয়ায় যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ইউনিয়নের প্রায় ১৪টি গ্রামের মানুষ। রাস্তাগুলো ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী হওয়ায় ডিজিটাল যুগেও উন্নয়নের ছোঁয়া মেলেনি। প্রতিদিন অন্তত ১৪টি গ্রামের মানুষ মাটির কাঁচা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। বিশেষ করে ঘিলাছড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সোনালী চেলা উচ্চ বিদ্যালয়,দ্বীনেরটুক দারুল কুরআন আলিম মাদ্রাসা,নাছিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,মন্তাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,চাইরগাও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,সোনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,চাইরগাও বাজার,নাছিমপুর বাজার,নরসিংপুর বাজার ও অফিস আদালতসহ বিভিন্ন জায়গার কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতসহ মালবাহী গাড়ি চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। একটু বৃষ্টি হলেই সড়কে হাঁটু পানি, কাদা জমে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কাদায় পোশাক নষ্ট হয়ে যায়। তাই অতি দ্রুত এ সড়ক পাকাকরণ করা না হলে দিনদিন জনসাধারণের দুর্ভোগ ও ভোগান্তি চরমে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
বীরেন্দ্রনগর গ্রামের আব্দুর রউফ বলেন, কাঁচা রাস্তা সামান্য বৃষ্টি হলেই একেবারে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বৃষ্টির ফোটা পড়ার পরেই কাঁদা পানিতে একাকার হয়ে যায়। প্রচণ্ড এ কাঁদায় চলতে গিয়ে অনেকেই পা পিছলে পড়ে গিয়ে গন্তব্যে যাবার আগেই বাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হন। শিক্ষার্থীরা সময় মতো স্কুল কলেজে যেতে পারে না।
মানুষকে পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তির আশায় বছরের পর বছর ভোগান্তির স্বীকার এসব এলাকার জনসাধারণ সংসদ সদস্য উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় মেম্বারের কাছে আবেদন জানালেও সড়কের কোনো উন্নয়ন হয়নি। এ রাস্তাটি মানুষের চলাচলে জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাস্তাটি পাকা করণে ছাতক-দোয়ারাবাজার আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক এমপিসহ জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
রাস্তার বিষয়ে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) দোয়ারাবাজার এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী অভিলাষ চাকমা বলেন, ‘এই রাস্তাগুলো আমাদের স্কিমে অন্তর্ভুক্ত করা আছে। অনুমোদন পেতে বেশ সময় লাগে। অনুমোদন পেলে সিরিয়াল মোতাবেক পাকাকরণ করা হবে।’