স্টাফ রিপোর্টার:
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনে পদত্যাগ করেছেন ঐতিহ্যবাহী সোনারগাঁও সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান অপু এবং তার সহধর্মীনি গ্রাহস্থ্য ও অর্থনীতি বিভাগে প্রধান দীল আফরোজা। রবিবার বিকাল সোয়া তিনটার দিকে শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনে তারা পদত্যাগ করতে বাঁধ্য হোন।
এরআগে, রবিবার সকাল থেকেই সোনারগাঁও সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘ দিন ধরে চলা নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও সরকারী কলেজে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলে। এ সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রবিবার সকালে কলেজ ক্যাম্পাসে ৮ দফা দাবি তুলে ধরে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন শ্লোগান দিলে উত্তাল হয়ে উঠে কলেজ ক্যাম্পাস। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে কলেজ চত্ত¡র।
অভিযোগ রয়েছে, দুর্নীতির বিষয়ে কোন শিক্ষার্থী যেন মুখ খূলতে না পারে সে জন্যে বিগত দিনে এলাকার বহিরাগত কিছু পাতি মাস্তান দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভিতি দেখানো হতো।
লিখিতভাবে তুলে ধরা শিক্ষার্থীদের ৮ দফা দাবি গুলোর মধ্যে রয়েছে, বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত ফি নিয়ে ভর্তি ও ফরম ফিলাপ করা এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে জানিয়ে তা ফেরত দেওয়া।
ভবিষ্যতে কলেজের অফিসিয়াল কোন কাজের টাকা নেওয়া যাবেনা। নিলে তা রিসিটের মাধ্যমেই নিতে হবে।
সার্টিফিকেট, রেজিষ্ট্রেশন কার্ড, এডমিট কার্ড ও আইডি কার্ড নেওয়া-দেওয়ার দেওয়ার ক্ষেত্রে টাকা লেনদেনের নিয়ম বাতিল করতে হবে।
যেহেতু কলেজ সরকারীকরণ হয়েছে সেহেতু, বোর্ড পরীক্ষা ছাড়া কলেজে কোন পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোন টাকা নেওয়ার নিয়ম বন্ধ করা।
কলেজ ক্যাম্পাসে কোন ছাত্র রাজনীতি না রাখা।
শিক্ষার্থীদের হয়রানী বন্ধ করতে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করে সে নির্ধারিত তারিখে ক্লাশ ভিত্তিক ফলাফল ঘোষণা করা।
শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে অধ্যক্ষকে লিখিত জবাব দেওয়া।
শিক্ষার্থীদের লিখিত ৮ দফা দাবি ছাড়াও মৌখিকভাবে আরও বেশ কিছু দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনের এক পর্যায় শিক্ষার্থীদের সাথে অধ্যক্ষের পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানের গ্রাহস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ও অধ্যক্ষের সহধর্মীনি দীল আফরোজ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলতে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের কলেজ অধ্যক্ষের সাথে কথা বলার আহবান জানান। এতে শিক্ষার্থীরা অস্বীকৃতি জানায় এবং অধ্যক্ষকে নিজে মুক্তমঞ্চে এসে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলার আহবান জানিয়ে ১০ মিনিট সময় বেঁধে দেয় নয়তা ৮ দফা এক দফায় রূপ নিবে বলে হুশিয়ারী দেয়। পরে শিক্ষার্থীদের বেঁধে দেওয়া সময়ের ৮ মিনিটের মধ্যে কলেজ অধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান অপু অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসের মুক্ত মঞ্চে আসেন এবং শিক্ষার্থীদের সকল দাবি যৌক্তিক উল্লেখ করে বিনা শর্তে মেনে নেন এবং কিছু কিছু দাবির বিষয়ে তদন্ত করার সময় চান। প্রথমে শিক্ষার্থীরা রাজি না থাকলেও পরক্ষণে তা মেনে নেন এবং শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত কলেজ অধ্যক্ষের সাথে আলোচনায় বসেন। অধ্যক্ষের সাথে আলোচনার সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের গালাগাল করে এবং কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে কিছু বহিরাগত একাধিক বোমা বিষ্ফোরণ ঘটায়। এমন ঘটনায় শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের সামনেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং কোন আলোচনা হবেনা বলে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে দিকে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়।
আন্দোলনের এক পর্যায় স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের কয়েকজন নেতা কলেজ ক্যাম্পাসে আসেন এবং ছাত্রদের দাবির সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে অধ্যক্ষের সাথে কথা বলেন।
এমতাবস্থায় একপর্যায় বিএনপি নেতাদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দিতে নেতারা অধ্যক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে ১০ মিনিট সময় বেঁধে দিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষ ত্যাগ করেন।
এরমধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বাইরে এসে অধ্যক্ষ আশরাফুজ্জামান আপু, তার স্ত্রী দীল আফরোজ, কেরানী জুয়েল এবং জাহাঙ্গীর হোসেনের পদত্যাগ দাবিতে শ্লোগান দেয়।
পরবর্তীতে ছাত্র ও বিএনপি নেতারা কলেজ অধ্যক্ষকে ছাত্রদের তোলা দাবির বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করলে সদুত্তর দিতে ব্যর্থ হয়ে সোনারগাঁও সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ্য আশরাফুজ্জামান অপু ও তার সহধর্মীনি গ্রাহস্থ্য অর্থনীতি বিভাগে প্রধান দীল আফরোজ পদত্যাগ করতে বাধ্য হোন।