বেতনের দাবিতে ৪র্থ দিনের মতো বেক্সিমকোর শ্রমিকদের চন্দ্রা–নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ

received_539385522244632.jpeg

রিপোর্টার,মোঃ মাজেদুল ইসলাম:-

অক্টোবর মাসের বেতনের দাবিতে সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে সড়ক অবরোধ করেন বেক্সিমকো ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পার্কের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা।

এক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে গাজীপুর মহানগরের সারাবোয় চক্রবর্তী এলাকায় ফের চন্দ্রা–নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকেরা। আজ (১৮ নভেম্বর) চতুর্থ দিনের মতো মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন তারা।

অবরোধের ফলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সড়কে চলাচলকারীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

স্থানীয়রা জানায়, সোমবার (১৮ নভেম্বর) সকাল ৯টা থেকে বেক্সিমকো ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল পার্কের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা অক্টোবর মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে চতুর্থ দিনের চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়কে অবস্থান নেন। এতে সড়কে চরম যানজটের সৃষ্টি হয়।

খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করছেন।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার তারা একই দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন। পরে শুক্রবার বিরতী দিয়ে শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পুনরায় মহাসড়ক অবরোধ করেন। রাতে সড়ক ছেড়ে দিলেও পরদিন রোববার আবারও তারা সড়কে অবস্থান নেন।

রোববার দিনভর আন্দোলন শেষে রাত ৯টার দিকে অবরোধ তুলে নেন শ্রমিকরা। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে যান চলাচল স্বাভাবিক হয় সড়কে। তবে দাবি পূরণ না হওয়ায় আজ সোমবার সকালে ফের একই মহাসড়ক অবরোধ করেছেন শ্রমিকরা।

সূত্র আরো জানায়, গাজীপুর মহানগরীর কাশেমপুর থানাধীন সারোবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ভেতরে এসব কারখানার মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সালমান এফ রহমানকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়। এরপর থেকে প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিকদের বেতন সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে পারছে না। প্রতিমাসেই শ্রমিকরা আন্দোলন করে বেতন আদায় করছেন। গত কয়েক মাসের মতো চলতি মাসেও অক্টোবরের বেতনের দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকরা।

শিল্প পুলিশ ও শ্রমিকরা জানান, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে পোশাক ও সিরামিক কারখানায় অন্তত ৪১,০০০ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। প্রতি মাসের তাদের বেতনের পরিমাণ হয় ৮০ থেকে ৮২ কোটি টাকা। প্রতি মাসের ৭ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে তাদের বেতন দেওয়া হতো। কিন্তু কারখানার শ্রমিকেরা অক্টোবর মাসের বেতন এখনো পাননি। এ কারণে তারা গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন শুরু করেন।

এদিকে, অবরোধের খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও মহানগর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে।

শ্রমিকরা বলছেন, বকেয়া বেতন প্রদানের আশ্বাস না পেলে তারা মহাসড়ক ছেড়ে যাবেন না।

অন্যদিকে, সড়ক অবরোধ করায় ওই রুট ব্যবহারকারী যাত্রী ও চালকেরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। অনেকে পায়ে হেঁটে, ব্যাটারি রিকশা করে, কেউ বা সুবিধা মতো বিকল্প উপায়ে যাতায়াত করছেন।

উত্তরবঙ্গের যানবাহন গাজীপুরের ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়ক, ধামরাই-কালিয়াকৈর আঞ্চলিক সড়ক ব্যবহার করে ঢাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে।

বেক্সিমকোর শ্রমিক আজিজুল বলেন, “গত কয়েক মাস ধরে আমাদের বেতনের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে। বেতনটা সময় মতো পেলে কেউ আর আন্দোলনে যাবে না। বেতন দিক, আমরা কাজে চলে যাব।”

শ্রমিক রাজিয়া আক্তার বলেন, “বেতন না দিলে আজ আর সড়ক থেকে যাচ্ছি না। সড়ক বন্ধ না করলে সরকারের টনক নড়ে না। তারা আমাদের কথা শুনতে চান না।”

এ বিষয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কাশিমপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, “বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকরা সকাল ৯টা থেকে সড়ক অবরোধ শুরু করে। তাদের বুঝয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।”

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top