রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আসার আহবান সিইসি’র

dp-cec-28-222.jpg

স্টাফ রিপোর্টার : রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতায় আসার আহবান সিইসি’র। দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার প্রথম দিন সোমবার ঢাকার আগারগাঁও নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, সেজন্য দেশের রাজনৈতিক নেতাদের নিজেদের মধ্যে ‘সমঝোতায়’ আসার আহ্বান জানিয়েছেন নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তিনি বলেছেন, “আমরা অনুনয়-বিনয় করব, আপনারা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করেন। একটা চুক্তিবদ্ধ হন, যে নির্বাচনটা সুন্দরভাবে পরিচালনা করবেন। ওখানে সহিংসতা থাকবে না। কেউ কাউকে বাধা দেবে না।”

শপথ নেওয়ার পরদিন সোমবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে এসে দায়িত্ব বুঝে নেন নতুন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন সিইসি হাবিবুল আউয়াল।

চার নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ রাশেদা সুলতানা এমিলি এবং অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খানও এ সময় তার পাশে ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে সিইসি বলেন, “রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে দায়িত্বটা রয়েছে, সেটা যদি শেয়ার না করেন, তাহলে নির্বাচন কমিশন এককভাবে যে কাজ করবে সেখানে সীমাবদ্ধতা দেখা দেবে। আমাদের দায়িত্ব আছে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে আবদার করা, বিনয় করা, অনুনয় করা। রাজনৈতিক নেতৃত্বকে আমরা সহযোগিতা করব।

“রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সহায়তা না করে, পলিটিক্যাল লিডারশিপের যদি ন্যূনতম সমঝোতা না থাকে। আমিতো তাদের মুরুব্বি হতে পারব না। উনারা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞানী, অনেক বেশি অভিজ্ঞ।”

গত কমিশনের সময়ে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলোতে সহিংসতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মনোভাবকেই দায়ী করেছিলেন সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদা।

সার্চ কমিটির সুপারিশে রাষ্ট্রপতি নতুন সিইসি হিসেবে হাবিবুল আউয়ালকে চূড়ান্ত করার পর তিনিও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সব দোষ নির্বাচন কমিশনকে দিলে তিনি তা মানবেন না।

দায়িত্ব নেওয়ার দিনও তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনকে অর্থবহ করার জন্য স্ব স্ব অবস্থান থেকে করণীয় না করেন, উনারা নিজেদেরকে প্রশ্ন করবেন, নাকি আমাদের প্রশ্নবিদ্ধ করবেন? তাহলে আমি সবিনয়ে বলব, আমাদের ক্ষমা করবেন। আপনাদের কিছু যদি ব্যর্থতা থাকে. তবে সেটাও স্বীকার করুন। সবাই যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রিস্টোর করুন। একটা ভালো সংসদ উপহার দিতে চেষ্টার ত্রুটি থাকবে না।”

কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন এই নতুন ইসির অধীনেই আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে।তবে সে সময় আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় থাকে, সেই নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিইসি বলেন, “বিএনপি যদি এমন ঘোষণা দিয়েও থাকে, আমরা কী তাদের চা খাওয়ার আমন্ত্রণ জানাব না? কোনো কথাই শেষ কথাই নয়।”

মুন্সেফ হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে সচিব হিসেবে অবসরে যাওয়া হাবিবুল আউয়াল এই সংবাদ সম্মেলনে ভোট আর গণতন্ত্রের প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব কমানোর ওপর জোর দিয়েছেন বার বার।

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে একটা সমঝোতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে হবে। কেউ কারও সাথে কথা বলব না, মাঠে যুদ্ধ করব…

“আলোচনা মাধ্যমে দূরত্ব কমে আছে। আমরা যদি মুখ ফিরিয়ে থাকি তাহলে কিন্তু দূরত্ব বাড়তে থাকবে। আলোচনা করতে হবে। কাউকে না কাউকে অহংকার পরিত্যাগ করে আলোচনা করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের শক্তি অসীম নয়। এটা সবসময় আপেক্ষিক।”

নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ভোট বর্জন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন আর যুদ্ধের চলমান ঘটনাপ্রবাহ থেকে উদাহরণ টানেন সিইসি।

তিনি বলেন, “মাঠ ছেড়ে চলে গেলে হবে না। মাঠে থাকবেন। কষ্ট হবে। জেলেনস্কি (ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট) হয়ত দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারতেন।

“তিনি পালাননি। তিনি বলেছেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করব’। তিনি রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরোধ যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। যেখানেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়, কিছুটা ধস্তাধস্তি হয়।”

নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবে সামর্থ্য, দক্ষতা ও শক্তির সবটুকু দিয়ে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে যাবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নতুন সিইসি। সেই সঙ্গে অন্য সব পক্ষের সহযোগিতাও তিনি চেয়েছেন।

“মিডিয়া ভালো রোল প্লে করতে পারে। সকলকে সচেতন করার ক্ষেত্রে মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, পরের প্রজন্মের জন্য সুশাসনের দিকে এগিয়ে,সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে একটা সংসদ উপহার দেওয়ার।

“সকলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে একটি দ্বান্দ্বিক সংসদ গড়ে উঠুক। আমরা সুন্দর নির্বাচনের মাধ্যমে গুড গভর্নেন্স ও ভালো সংসদ গড়ে তোলার চেষ্টা করব। এদিক থেকে আমাদের কোনো কার্পণ্য থাকবে না।”

সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি নতুন কমিশনকে ‘আমলানির্ভর’ আখ্যা দিয়েছে, এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হাবিবুল আউয়াল বলেন, “আমি কী রাতে গিয়ে ভোটবাক্স চুরি করে ওখানে গিয়ে ভোট দেব? নাকি দেখেও না দেখার মত থাকব। আমি সরকারি কর্মাচারী ছিলাম। অতীতে যারা ছিলেন, কে ছিলেন না?।

“কেউ কেউ বলেন, শামসুল হুদা সাহেবের নির্বাচন ভালো ছিল, কেউ বলে সাহাবুদ্দীন সাহেবেরটা ভালো ছিল। এগুলো আপেক্ষিক।”

আবারও রাজনৈতিক নেতাদের দায়িত্বে দিকগুলো মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক নেতৃত্বের যে দায়িত্বটা রয়েছে, সেটা যদি শেয়ার না করেন, তাহলে নির্বাচন কমিশন এককভাবে যে কাজ করবে, সেখানে সীমাবদ্ধতা দেখা দেবে।

“ভোট কেন্দ্রে গিয়ে যারা ভোট দেন, সেটা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশাবাদী। আমাদের ওপর আস্থা রাখেন।”

বিএনপির নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, “নির্বাচন সরকার করে না। নির্বচানের সময় একটা সরকার থাকে। কোনো না কোনো সরকার থাকবেই। ওয়ান-ইলেভেনের সময় ছিল, নির্দলীয় সরকার ছিল।

“এখন যে সাংবিধানিক ব্যবস্থা আছে, সেটা মেনেই আমরা চেষ্টা করব, ভোটাররা যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে, সেটা বড় চ্যালেঞ্জ।”

সংবাদ সম্মেলনে সিইসি জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পর কমিশনের প্রথম দিনের বৈঠক ছিল মূলত নিজেদের মধ্যে পরিচিতি পর্ব।

“কমিশনের কর্মপরিধি সম্পর্কে সচিব আমাদের অবহিত করেছেন। আমরা খুব অভিজ্ঞ নই। আমি একেবারেই নতুন, তবে গণমাধ্যমে নির্বাচনের খবর দেখেছি। নির্বাচন ঘরে বসে পর্যবেক্ষণ করেছি। কিছুটা অস্বচ্ছ হলেও ধারণা আছে।

“আমরা প্রত্যাশা করি, সকলে নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতন্ত্রকে সুসংহত করবেন। যারা নির্বাচন করবেন তাদের জন্য অনূকুল পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব কমিশনের রয়েছে। কর্মপদ্ধতি কী হবে সেটি ঠিক করিনি। তবে জানতে কিছু জ্ঞান আহরণ করেছি।”

নির্বাচনকে একটি ‘বিশাল কর্মযজ্ঞ’ হিসেবে বর্ণনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের আগ্রহ থাকে, সবার আবেগ বুঝতে হয়।

“আমরা সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে দায়িত্ব পালন করব। আমরা কতটা সৎ ছিলাম, দায়িত্ব পালন করেছি, সেটি পরে মূল্যয়ন করতে পারবেন।

Share this post

PinIt

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top